পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VVO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী অধ্যাপক । তা আমাকে ওর একটি ফুল দাও, শুধু ক্ষণকালের দান, ওর রঙের তত্ত্বটি বোঝবার চেষ্টা নন্দিনী । এই নাও । আজ রঞ্জন আসবে, সেই আনন্দে এই ফুলটি তোমাকে দিলুম। [অধ্যাপকের প্রস্থান সুড়ঙ্গ-খোদাইকর গোকুলের প্রবেশ গোকুল। একবার মুখ ফেরাও তো দেখি ।- তোমাকে বুঝতেই পারলুম না। তুমি কে । নন্দিনী । আমাকে যা দেখছি তা ছাড়া আমি কিছুই না । বোঝবার তোমার দরকার কী । গোকুল। না বুঝলে ভালো ঠেকে না । এখানে তোমাকে রাজা কোন কাজের প্রয়োজনে এনেছে। নন্দিনী । অকাজের প্রয়োজনে । গোকুল। একটা কী মন্তর তোমার আছে। ফদে ফেলেছি। সবাইকে । সর্বনাশী তুমি । তোমার ঐ সুন্দর মুখ দেখে যারা ভুলবে তারা মরবে। দেখি দেখি, সিঁথিতে তোমার ঐ কী বুলছে। নন্দিনী । রক্তকরবীর মঞ্জরি । গোকুল । ওর মানে কী { নন্দিনী । ওর কোনো মানেই নেই । গোকুল। আমি কিছু তোমাকে বিশ্বাস করি নে। একটা কী ফন্দি করেছ। আজ দিন না যেতেই একটা-কিছু বিপদ ঘটাবে। তাই এত সাজ । ভয়ংকরী, ওরে ভয়ংকরী। নন্দিনী । আমাকে দেখে তোমার এমন ভয়ংকর মনে হচ্ছে কেন । গোকুল । দেখে মনে হচ্ছে, তুমি রাঙা আলোর মশাল। যাই, নির্বোিধদের বুঝিয়ে বলিগে, “সাবধান, সাবধান, সাবধান ।” [প্ৰস্থান নন্দিনী । (জালের দরজায় ঘা দিয়ে) শুনতে পােচ্ছ ? নেপথ্যে । নন্দা, শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু বারে বারে ডেকো না, আমার সময় নেই, একটুও না । নন্দিনী । আজ খুশিতে আমার মন ভরে আছে । সেই খুশি নিয়ে তোমার ঘরের মধ্যে যেতে চাই । নেপথ্যে । না, ঘরের মধ্যে না, যা বলতে হয় বাইরে থেকে বলো । নন্দিনী । কুঁদফুলের মালা গেথে পদ্মপাতায় ঢেকে এনেছি। নেপথ্যে । নিজে পরো । নন্দিনী । আমাকে মানায় না, আমার মালা রক্তকরবীর । নেপথ্যে । আমি পর্বতের চূড়ার মতো, শূন্যতাই আমার শোভা । নন্দিনী । সেই চুড়ার বুকেও ঝরনা ঝরে, তোমার গলাতেও মালা দুলবে। জাল খুলে দাও, ভিতরে যাব । নেপথ্যে । আসতে দেব না, কী বলবে শীঘ্ৰ বলে । সময় নেই। নন্দিনী । দূর থেকে ঐ গান শুনতে পােচ্ছ ? নেপথ্যে । কিসের গান । নন্দিনী । পৌষের গান । ফসল পেকেছে, কাটতে হবে, তারই ডাক । 5m(F পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে- আয় রে চলে, আয় আয় আয় । ডালা যে তার ভরেছে আজ পাকা ফসলে, মরি, হায় হায় হায় ।