পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রক্তকরবী VSV চন্দ্ৰা । বেয়াই, এ আমাদের দুঃখের জায়গা, ও-যে এখানে অষ্টপ্রহর কেবল সুন্দরিপনা করে বেড়ায়, এ আমরা দেখতে পারি। নে । গোকুল। আমরা বিশ্বাস করি সাদা মোটাগোছের চেহারা, বেশ ওজনে ভারী। বিশু ।। যক্ষপুরীর হাওয়ায় সুন্দরের পরে অবজ্ঞা ঘটিয়ে দেয়, এইটেই সর্বনেশে । নরকেও সুন্দর আছে, কিন্তু সুন্দরকে কেউ সেখানে বুঝতেই পারে না, নরকবাসীর সব চেয়ে বড়ো সাজা তাই । চন্দ্ৰা । আচ্ছা বেশ, আমরাই যেন মুঘু, কিন্তু এখানকার সর্দার পর্যন্ত ওকে দুচক্ষে দেখতে পারে না, তা ܕ ܐ বিশু । দেখো দেখো চন্দ্ৰা, সর্দারের দুচক্ষুর ছোয়াচ যেন তোমাকে না লাগে, তা হলে আমাদের দেখেও তোমার চক্ষু লাল হয়ে উঠবে - আচ্ছা, তুই কী বলিস ফাগুলাল । ফাগুলাল । সত্যি কথা বলি দাদা, নন্দিনীকে যখন দেখি, নিজের দিকে তাকিয়ে লজা করে । ওর সামনে কথা কইতে পারি। নে । গোকুল । বিশুভাই, ঐ মেয়েকে দেখে তোমার মন ভুলেছে সেইজন্যে দেখতে পােচ্ছ না ও কী অলক্ষণ নিয়ে এসেছে। বুঝতে বেশি দেরি হবে না, বলে রাখলুম। ফাগুলাল। বিশুভাই, তোমার বেয়ান জানতে চায় আমরা মদ খাই কেন । বিশু । স্বয়ং বিধির কৃপায় মদের বরাদ্দ জগতের চারদিকেই, এমনকি, তোমাদের ঐ চোখের কাটাক্ষে । আমাদের এই বাহুতে আমরা কাজ জোগাই, তোমাদের বাহুর বন্ধনে তোমরা মদ জোগাঁও । জীবলোকে মজুরি করতে হয়, আবার মজুরি ভুলতেও হয়। মদ না হলে ভোলাবে কিসে।। চন্দ্ৰা । তাই বৈকি। তোমাদের মতো জন্মমাতালের জন্যে বিধাতার দয়ার অন্ত নেই। মদের ভাণ্ড উপুড় করে দিয়েছেন । বিশু । এক দিকে ক্ষুধা মারছে চাবুক, তৃষ্ণা মারছে চাবুক ; তারা জ্বালা ধরিয়েছে, বলছে, কাজ করো। দিকে বনের সােল মেলেছে মায়া, রোদের সোনা মেলেছে মায়া, ওরা নেশা ধরিয়েছে, বলছে, ছুটি চন্দ্ৰা । এইগুলোকে মদ বলে নাকি । বিশু । প্ৰাণের মদ, নেশা ফিকে, কিন্তু দিনরাত লেগে আছে। প্রমাণ দেখো। এ রাজ্যে এলুম, পাতালে সিধকাটার কাজে লাগলুম, সহজ মদের বরাদ্দ বন্ধ হয়ে গেল। অন্তরাত্মা তাই তো হাটের মদ নিয়ে মাতামাতি করছে। সহজ নিশ্বাসে যখন বাধা পড়ে, তখনই মানুষ ইপিয়ে নিশ্বাস টানে । F তোর প্রাণের রস তো শুকিয়ে গেল ওরে, তবে মরণরসে নে পেয়ালা ভরে। সে যে চিতার আগুন গালিয়ে ঢালা, সব জ্বলনের মেটায় জ্বালা, সব শূন্যকে সে অট্ট হেসে দেয় যে রঙিন করে। চন্দ্ৰা । এসো-না বেয়াই, পালাই আমরা । বিশু । সেই নীল চাঁদোয়ার নীচে, খোলা মদের আড্ডায় ! রাস্তা বন্ধ । তাই তো এই কয়েদখানার চোরাই মদের ওপর এমন ভয়ংকর টান । আমাদের না আছে আকাশ, না আছে অবকাশ ; তাই বারো ঘণ্টার সমস্ত হাসি গান সূর্যের আলো কড়া করে টুইয়ে নিয়েছি। একচুমুকের তরল আগুনে। যেমন ঠাস দাসত্ব তেমনি নিবিড় ছুটি । . তোর সূৰ্য ছিল গহন মেঘের মাঝে, তোর দিন মরেছে অকাজেরই কাজে,