পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లy রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী পুরবালা । দেখো, এখন বাবা নেই। মা তোমারই মুখ চেয়ে আছেন। তোমারই কথা শুনে এখনো তিনি বেশি বয়স পর্যন্ত মেয়েদের লেখাপড়া শেখাচ্ছেন। এখন যদি সৎপাত্র না জুটিয়ে দিতে পার তা হলে কী অন্যায় হবে ভেবে দেখো দেখি । অক্ষয় । আমি তো তোমাকে বলেইছি তোমরা কোনো ভাবনা কোরো না । আমার শ্যালীপতিরা গোকুলে বাড়ছেন। পুরবালা । গোকুলটি কোথায় । অক্ষয় । যেখান থেকে এই হতভাগ্যকে তোমার গোষ্ঠে ভর্তি করেছ। আমাদের সেই চিরকুমার-সভা । পুরবালা । প্রজাপতির সঙ্গে তাদের যে লড়াই। অক্ষয় । দেবতার সঙ্গে লড়াই করে পারবে কেন । তাকে কেবল চটিয়ে দেয় মাত্র । সেইজন্যে ভগবান প্ৰজাপতির বিশেষ ঝোক ঐ সভাটার উপরেই। সরা-চাপা হাঁড়ির মধ্যে মাংস যেমন গুমে গুমে সিদ্ধ হতে থাকে প্ৰতিজ্ঞার মধ্যে চাপা থেকে সভ্যগুলিও একেবারে হাড়ের কাছ পর্যন্ত নরম হয়ে উঠেছেন, দিব্যি বিবাহযোগ্য হয়ে এসেছেন- এখন পাতে দিলেই হয় । আমিও তো এক কালে ঐ সভার সভাপতি ছিলুম। পুরবালা । তোমার কী রকম দশটাি হয়েছিল। অক্ষয় । সে আর কী বলব। প্ৰতিজ্ঞা ছিল স্ত্রী শব্দ পর্যন্ত মুখে উচ্চারণ করব না, কিন্তু শেষকালে এমনি হল যে মনে হত শ্ৰীকৃষ্ণের ষোলো-শো গোপিনী যদি বা সম্প্রতি দুখপ্ৰাপ্য হন। অন্তত মহাকালীর চৌষট্টি হাজার যোগিনীর সন্ধান পেলেও একবার পেট ভরে প্ৰেমালাপটা করে নিই- ঠিক সেই সময়টাতেই তোমার সঙ্গে সাক্ষাৎ হল আর-কি ! পুরবালা । চৌষট্টি হাজারের শখ মিটাল ? অক্ষয় । সে আর তোমার মুখের সামনে বলব না। জাক হবে । তবে ইশারায় বলতে পারি, মা কালী দয়া করেছেন বটে । পুরবালা । তবে আমিও বলি, বাবা ভোলানাথের নদীভৃঙ্গীর অভাব ছিল না, আমাকে বুঝি তিনি দয়া করেছিলেন । অক্ষয় । তা হতে পারে, সেইজন্যেই কীর্তিকটি পেয়েছ । পুরবালা । আবার ঠাট্টা শুরু হল ? অক্ষয় । কার্তিকের কথাটা বুঝি ঠাট্টা ? গা ছুয়ে বলছি, ওটা আমার অন্তরের বিশ্বাস । শৈলবালার প্রবেশ শৈলবালা । মুখুজেমশায়, এইবার তোমার ছোটাে দুটি শ্যালীকে রক্ষা করো। অক্ষয়। যদি অরক্ষণীয়া হয়ে থাকেন তো আমি আছি। ব্যাপারটা কী। শৈলবালা । মার কাছে তাড়া খেয়ে রসিকদাদা কোথা থেকে একজোড়া কুলীনের ছেলে এনে হাজির করেছেন, মা স্থির করেছেন তাদের সঙ্গেই তার দুই মেয়ের বিবাহ দেবেন। অক্ষয় । ওরে বাস রে । একেবারে বিয়ের এপিডেমিক । প্লেগের মতো । এক বাড়িতে একসঙ্গে দুই কন্যেকে আক্রমণ । ভয় হয়। পাছে আমাকেও ধরে ! 하iF বড়ো থাকি কাছাকাছি, তাই ভয়ে ভয়ে আছি । নয়ন বচন কোথায় কখন বাজিলে বাচি না-বাচি । শৈলবালা । এই কি তোমার গান গাবার সময় হল ।