পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা 8ðO আমাদের কণ্ঠস্বর প্রবল হয়ে ওঠে, সেইটেই তোমাদের কর্ণগোচর হয় ; আর অনুরাগে যখন আমাদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে, ক্যানের কাছে মুখ আনতে গিয়ে মুখ বারংবার লক্ষ্যভ্ৰষ্ট হয়ে পড়তে থাকে- তখন তো খবর পাও না । পুরবালা । আঃ, চুপ করো। অক্ষয় । যখন গয়নার ফর্দ হয় তখন বাড়ির সরকার থেকে সেকরা পর্যন্ত সেটা কারও অবিদিত থাকে না, কিন্তু বসন্তনিশীথে যখন প্ৰেয়সী পুরবালা । আঃ, থামো । অক্ষয় । বসন্তনিশীথে প্ৰেয়সীপুরবালা । আঃ, কী বকছ তার ঠিক নেই। অক্ষয় । বসন্তনিশীথে যখন প্ৰেয়সী গর্জন করে বলেন “আমি কালই বাপের বাড়ি চলে যাব, আমার একদণ্ড এখানে থাকতে ইচ্ছে নেই- আমার হাড় কালি হল- আমার পুরবালা । ইগো মশায়, কবে তোমার প্ৰেয়সী বাপের বাড়ি যাব বলে বসন্তনিশীথে গর্জন করেছে। অক্ষয় । ইতিহাসের পরীক্ষা ? কেবল ঘটনা রচনা করে নিকৃতি নেই ? আবার সন তারিখ -সুদ্ধ মুখে মুখে বানিয়ে দিতে হবে ? আমি কি এতবড়ো প্রতিভাশালী । রসিক । (পুরবালার প্রতি) বুঝেছি ভাই, সোজা করে ও তোমার কথা বলতে পারে না- ওর এত ক্ষমতাই নেই- তাই উলটে বলে ; আদরে না। কুলোলে গাল দিয়ে আদর করতে হয় । পুরবালা । আচ্ছা মল্লিনাথজি, তোমার আর ব্যাখ্যা করতে হবে না। মা যে শেষকালে তোমাকেই কাশী নিয়ে যাবেন স্থির করেছেন । রসিক । তা, বেশ তো, এতে আর ভয়ের কথাটা কী । তীর্থে যাবার তো বয়সই হয়েছে। এখন তোমাদের লোলকাটাক্ষে এ বৃদ্ধের কিছুই করতে পারবে না- এখন চিত্ত চন্দ্রচূড়ের চরণে— মুন্ধনিশ্ববিদগ্ধলুব্ধমধুৱৈলোঁলৈঃ কটাক্ষৈরলং চেতঃ সম্প্রতি চন্দ্রচূড়চরণাধ্যানামৃতে বর্ততে । পুরবালা । সে তো খুব ভালো কথা, তোমার উপরে আর কটাক্ষের অপব্যয় করতে চাই নে, এখন চন্দ্ৰচুড়চরণে চলো- তা হলে মাকে ডাকি । রসিক । (করজোড়ে) বড়দিদিভাই, তোমার মা আমাকে সংশোধনের বিস্তর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু একটু অসময়ে সংস্কারকার্য আরম্ভ করেছেন- এখন তার শাসনে কোনো ফল হবে না। বরঞ্চ এখনো নষ্ট হবার বয়স আছে, সে বয়সটা বিধাতার কৃপায় বরাবরই থাকে, লোল কটাক্ষটা শেষকাল পর্যন্ত খাটে, কিন্তু উদ্ধারের বয়স আর নেই। তিনি এখন কাশী যাচ্ছেন, কিছুদিন এই বৃদ্ধ শিশুর বুদ্ধিবৃত্তির উন্নতিসাধনের দুরাশা পরিত্যাগ করে শান্তিতে থাকুন- কেন তোরা তাকে কষ্ট দিবি । জগত্তারিণীর প্রবেশ জগত্তারিণী । বাবা, তা হলে আসি । অক্ষয় । চললে নাকি মা ? রসিকদাদা যে এতক্ষণ দুঃখ করছিলেন যে তুমিরসিক । (ব্যাকুলভাবে) দাদার সকল কথাতেই ঠাট্টা । মা, আমার কোনো দুঃখ নেই, আমি কেন দুঃখ করতে যাব । অক্ষয় । বলছিলে না যে বড়োমা একলাই কাশী যাচ্ছেন, আমাকে সঙ্গে নিলেন না ? রসিক । ইয়া, সে তো ঠিক কথা । মনে তো লাগতেই পারে, তবে কিনা মা যদি নিতান্তইজগত্তারিণী । না বাপু, বিদেশে তোমার রসিকদাদাকে সামলাবে কে । ওঁকে নিয়ে পথ চলতে পারব না । পুরবালা । কেন মা, রসিকদাদাকে নিয়ে গেলে উনি তোমাকে দেখতে-শুনতে পারতেন । মুক্তি। ব্লক্ষে করে, আমাকে আর দেখে শুনি কাজ দেই। তােমার রসিকদার বৃদ্ধির পরিচয় Oys