পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8&& রবীন্দ্র-রচনাবলী । চন্দ্ৰ । (কিঞ্চিৎ লজ্জিত হইয়া খাতাটি নাকের কাছে তুলিয়া লইয়া) অক্ষয়বাবু, আপনি জানেন তো আমাদের আয় অক্ষয় । আয়ের কথাটা আর প্রকাশ করবেন না, আমি জানি ও আলোচনাটা চিত্তপ্ৰফুল্পকর নয়। ভালো ঘরের বন্দোবস্ত করে রাখা হয়েছে, সেজন্যে আপনাদের ধনাধ্যক্ষকে স্মরণ করতে হবে না। চলুন-না, আজই সমস্ত দেখিয়ে শুনিয়ে আনি । বিমর্ষবিপিন-শ্ৰীশের মুখ উজ্জ্বল হইয়া উঠিল। সভাপতিও প্রফুল্প হইয়া উঠিয়া চুলের মধ্য দিয়া বার বার আঙুল বুলাইতে বুলাইতে চুলগুলাকে অত্যন্ত অপরিষ্কার করিয়া তুলিলেন । কেবল পূর্ণ অত্যন্ত দমিয়া গেল পূর্ণ। সভার স্থান-পরিবর্তনটা কিছু নয়। অক্ষয় । কেন, এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি করলেই কি আপনাদের চিরকীেমার্যের প্রদীপ হাওয়ায় নিবে যাবে । পূর্ণ। এ ঘরটি তো আমাদের মন্দ বোধ হয় না। অক্ষয় ; মন্দ নয় । কিন্তু এর চেয়ে ভালো ঘর শহরে দুস্তপ্রাপ্য হবে না । পূর্ণ। আমার তো মনে হয় বিলাসিতার দিকে মন না দিয়ে খানিকটা কষ্টসহিষ্ণুতা অভ্যাস করা ভালো । শ্ৰীশ । সেটা সভার অধিবেশনে না করে সভার বাইরে করা যাবে । বিপিন । একটা কাজে প্ৰবৃত্ত হলেই এত ক্লেশ সহ্য করবার অবসর পাওয়া যায় যে, অকারণে বলক্ষয় করা মুঢ়তা । অক্ষয় । বন্ধুগণ, আমার পরামর্শ শোনো, সভাঘরের অন্ধকার দিয়ে চিরকীেমাৰ্যব্রতের অন্ধকার আর বাড়িয়ো না । আলোক এবং বাতাস স্ত্রীজাতীয় নয়, অতএব সভার মধ্যে ও দুটােকে প্রবেশ করতে বাধা দিয়ে না । আরো বিবেচনা করে দেখো, এ স্থানটি অত্যন্ত সরস, তোমাদের ব্ৰতটি তদুপযুক্ত নয়। বাতিকের চর্চা করছ করো, কিন্তু বাতের চর্চা তোমাদের প্রতিজ্ঞার মধ্যে নয়। কী বল শ্ৰীশবাবু। বিপিনবাবুর কী মত । শ্ৰীশ ও বিপিন। ঠিক কথা । ঘবুটা একবার দেখেই আসা যাক-না। পূৰ্ণ বিমর্ষ হইয়া নিরুত্তর রহিল। পাশের ঘরেও চাবি একবার ঠন করিল কিন্তু অত্যন্ত অপ্ৰসন্ন সুরে অক্ষয় । চন্দ্ৰবাবু, এখনই আসুন-না, দেখিয়ে আনি । চন্দ্ৰবাবু। চলুন । [চন্দ্ৰবাবু ও অক্ষয়ের প্রস্থান বিপিন। দেখো পূৰ্ণবাবু, সত্যি কথা বলছি তোমাকে, চিরকুমার-সভার ফ্রন্টিয়ার পলিসিতে আমরা পর্দা জিনিসটার অনুমোদন করি নে। ঐখান থেকেই শক্রিপ্রবেশের পথ । পূর্ণ। মানে কী হল। বিপিন। পর্দার মতো উড়ন্ধু জিনিস, অল্প একটু হাওয়াতে চঞ্চল হয়ে ওঠে, কুমার-সভার সে যোগ্য শ্ৰীশ । এখানকার সীমানা রক্ষার জন্য পাকা ইটের দেওয়ালের মতো আচল পদার্থ চাই। ঐ পর্দাটা ভালো ঠেকছে না । পূর্ণ। তোমাদের কথাগুলো কিছু রহস্যময় শোনাচ্ছে। বিপিন। সে কথা ঠিক। রহস্য পদার্থটাই সর্বানশে। চিরকুমারদের সকলের চেয়ে যে বড়ো শক্ৰ পর্দা-বেষ্টনীর মধ্যেই তার বাস । শ্ৰীশ । আমাদের ব্রত হচ্ছে পর্দাটাকে আক্রমণ করা, তাকে ছিন্ন করে ফেলা | পর্দার ছায়ায় ছায়ায় ফেরে যে মায়ামৃগী আলো ফেললেই মরীচিকার মতো সে মিলিয়ে যাবে।