পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা 8SVO নির্মলা । (পূর্ণ এবং শ্ৰীশের প্রতি অশ্রুজলস্নাত কটাক্ষপাত করিয়া) আমি যদি কাজ করতে চাই, যিনি আমার আশৈশবের গুরু, মৃত্যু পর্যন্ত যদি সকল শুভচেষ্টায় তঁর অনুবর্তিনী হতে ইচ্ছা করি, আপনারা কেবল তর্ক করে আমার অযোগ্যতা প্ৰমাণ করতে চেষ্টা করেন কেন । আপনারা আমাকে কী জানেন । শ্ৰীশ স্তব্ধ। পূর্ণ ঘর্মািক্ত নির্মলা । আমি আপনাদের কুমার-সভা বা অন্য কোনাে সভা জানি নে, কিন্তু র্যার শিক্ষায় আমি মানুষ হয়েছি তিনি যখন কুমার-সভাকে অবলম্বন করেই তার জীবনের সমস্ত উদ্দেশ্য-সাধনে প্রবৃত্ত হয়েছেন, তখন এই কুমার-সভা থেকে আপনারা আমাকে দূরে রাখতে পারবেন না । (চন্দ্রবাবুর দিকে ফিরিয়া) তুমি যদি বল আমি তোমার কাজের যোগ্য নই তা হলে আমি বিদায় হব, কিন্তু এঁরা আমাকে কী জানেন । এঁরা কেন আমাকে তোমার অনুষ্ঠান থেকে বিচ্ছিন্ন করবার জন্যে সকলে মিলে তর্ক করছেন। শ্ৰীশ । (বিনীত মৃদুস্বরে) মাপ করবেন, আমি আপনার সম্বন্ধে কোনো তর্ক করি নি, আমি সাধারণত স্ত্রীজাতি সম্বন্ধেই বলছিলুম। নির্মলা । আমি স্ত্রীজাতি পুরুষজাতির প্রভেদ নিয়ে কোনো বিচার করতে চাই নে- আমি নিজের অন্তঃকরণ জানি এবং র্যার উন্নত দৃষ্টান্তকে আশ্রয় করে রয়েছি তার অন্তঃকরণ জানি, কাজে প্ৰবৃত্ত হতে এর বেশি আমার আর-কিছু জানিবার দরকার নেই। চন্দ্ৰবাবু নিজের দক্ষিণ করতল চোখের অত্যন্ত কাছে লইয়া নিরীক্ষণ করিয়া দেখিতে লাগিলেন পূর্ণ খুব চমৎকার করিয়া একটা কিছু বলিবার ইচ্ছা করিলকিন্তু তাহার মুখ দিয়া কোনো কথাই বাহির হইল না। পূর্ণ। (মনে মনে অনেক আবৃত্তি করিয়া) দেবী, এই পঙ্কিল পৃথিবীর কাজে কেন আপনার পবিত্র দুইখানি হস্ত প্রয়োগ করতে চাচ্ছেন কথাটা মনে যেমন লাগিতেছিল মুখে তেমন শোনাইল না, পূর্ণ বলিয়াই বুঝিতে পারিল কথাটা গদ্যের মধ্যে পদ্যের মতো কিছু যেন বাড়াবাড়ি হইয়া পড়িললজায় তাহার কান লাল হইয়া উঠিল বিপিন । (স্বাভাবিক সুগভীর শান্ত স্বরে) পৃথিবী যত বেশি পঙ্কিল পৃথিবীর সংশোধনকার্য তত বেশি পবিত্র । শ্ৰীশ । সভার অধিবেশনে স্ত্রীসভ্য লওয়া সম্বন্ধে নিয়মমত প্ৰস্তাব উত্থাপন করে যা স্থির হয় আপনাকে ७ोन्मद | নির্মলা এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করিয়া নিঃশব্দে চলিয়া যাইবার উপক্ৰম করিল চন্দ্ৰ । (হঠাৎ) ফেনি, আমার সেই গলার বোতামটা ? নির্মলা । (সলজ হাসিয়া মৃদুকণ্ঠে) গলাতেই আছে। চন্দ্র । (গলায় হাত দিয়া) ই হী, আছে বটে । তিন ছাত্রের দিকে চাহিয়া হাসিলেন চতুর্থ দৃশ্য অক্ষয়ের বাসা নৃপবালা ও নীরবালা নৃপবালা। আজকাল তুই মাঝে মাঝে কেন অমন গভীর হচ্ছিস বল তো নীরু। নীরবালা । আমাদের বাড়ির যত কিছু গভীৰ্য সব বুঝি তোর একলার ? আমার খুশি আমি গভীর হব। নৃপবালা । তুই কী ভাবছিস আমি বেশ জানি।