পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা 886 শ্ৰীশ । বা বা, রসিকবাবু, আপনার মধ্যে এত আছে তা তো জানতুম না । রসিক । কী করে জানবেন বলুন । কাব্যলক্ষ্মী যে তার পদ্মবন থেকে মাঝে মাঝে এই টাকের উপরে খোলা হাওয়া খেতে আসেন এ কেউ সন্দেহ করে না । (হাত বুলাইয়া) কিন্তু, এমন ফাঁকা জায়গা আর নেই । শ্ৰীশ । আহাহা রসিকবাবু, যমুনাতীরে সেই স্নিগ্ধ অলিন্দদ-ওয়ালা কুঞ্জ কুটিরটি আমার ভারি মনে লেগে গেছে । যদি পায়োনিয়রে বিজ্ঞাপন দেখি সেটা দেনার দায়ে নিলেমে বিক্রি হচ্ছে তা হলে কিনে ফেলি । রসিক । বলেন কী শ্ৰীশবাবু। শুধু অলিন্দ নিয়ে করবেন কী । সেই মদমুকুলিতাক্ষীর কথাটা ভেবে দেখবেন । সে নিলেমে পাওয়া শক্ত । শ্ৰীশ । কার রুমাল এখানে পড়ে রয়েছে ! রসিক । দেখি দেখি । তাই তো । দুর্লভ জিনিস আপনার হাতে ঠেকে দেখছি। বাঃ, দিব্য গন্ধ । শ্লোকের লাইনটা বদলাতে হবে মশায়, ছন্দ ভঙ্গ হয় হােক গে- বাসন্তীনবপরিমালোদগাররুমালাং । শ্ৰীশবাবু, এ রুমালটাতে তো আমাদের কুমার-সভার পতাকা নির্মাণ চলবে না । দেখেছেন কোণে একটি ছোট্ট “ন’ অক্ষর লেখা রয়েছে ? শ্ৰীশ । কী নাম হতে পারে বলুন দেখি । নলিনী ? না, বডড চলিত নাম । নীলাম্বুজা ? ভয়ংকর মোটা । নীহারিকা ? বড়ো বাড়াবাড়ি । বলুন-না রসিকবাবু, আপনার কী মনে হয় । রাসিক । নাম মনে হয় না মশায় আমার ভাব মনে আসে, অভিধানে যত না আছে সমস্ত মাথার মধ্যে রাশীকৃত হয়ে উঠতে চাচ্ছে, ‘নয়ের মালা গেঁথে একটি নীলোৎপলনয়নার গলায় পরিয়ে দিতে ইচ্ছে শ্ৰীশ । নবমল্লিকা । রসিক । বেশ বেশ- নির্মলনবনী নিন্দিতনবীননবমল্লিকা ৷ গীতগোবিন্দ মাটি হল । আরো অনেকগুলো ভালো ভালো ‘ন মাথার মধ্যে হাহাকার করে বেড়াচ্ছে, মিলিয়ে দিতে পারছি নে— নিভৃত নিকুঞ্জনিলয়, নিপুণনুপুরনিক্কণ, নিবিড়নীরদ নিরমুক্ত— অক্ষয়দাদা থাকলে ভাবতে হত না । মাস্টারমশায়কে দেখবামাত্র ছেলেগুলো যেমন বেঞ্চে নিজ নিজ স্থানে সার বেঁধে বসে তেমনি অক্ষয়দাদার সাড়া পাবামাত্র কথাগুলো দৌড়ে এসে জুড়ে দাড়ায় - শ্ৰীশবাবু, বুড়ো মানুষকে বঞ্চনা করে রুমালখানা চুপি চুপি পকেটে পুরবেন। শ্ৰীশ । আবিষ্কারকর্তার অধিকার সকলের উপররসিক । আমার ঐ রুমালখানিতে একটু প্রয়োজন আছে শ্ৰীশবাবু। আপনাকে তো বলেছি আমার বীথীষুবীথীষু বিলাসিনীনাং মুখানি সংবীক্ষ্য শুচিস্মিতানি জালেষু জালেষু করং প্রসার্য লাবণ্যভিক্ষামটতীব চন্দ্ৰঃ । কুঞ্জ- পথে পথে চাদ উকি দেয় আসি, দেখে বিলাসিনীদের মুখভরা হাসি । কর প্রসারণ করি ফিরে সে জাগিয়া বাতায়নে বাতায়নে লাবণ্য মাগিয়া । হতভাগা ভিক্ষুক আমার বাতায়নটায় যখন আসে তখন তাকে কী দিয়ে ভোলাই বলুন তো। কাব্যশাস্ত্রের রসালো জায়গা যা-কিছু মনে আসে সমস্ত আউড়ে যাই, কিন্তু কথায় চিড়ে ভেজে না। সেই দুর্ভিক্ষের সময় ঐ রুমালখানি বড়ো কাজে লাগবে । ওতে অনেকটা লাবণ্যের সংস্রব আছে। শ্ৰীশ । সে লাবণ্য দৈবাৎ কখনো দেখেছেন রসিকবাবু ?