পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা BS তুলো দিয়ে মুড়ে রাখতে পারে । তাকে অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়ার মতো ছেড়ে দাও, যে তাকে বাধবে তার সঙ্গে লড়াই করে । বিপিন। ও কে হে। পূর্ণ দেখছি । ও বেচারার এ গলি থেকে আর বেরোবার জো নেই। ঐ বীরপুরুষের অশ্বমেধের ঘোড়াটি বেজায় খোড়াচ্ছে। ওকে একবার ডাক দেব ? শ্ৰীশ । ডাকে । ও কিন্তু আমাদেরই দুজনকে অন্বেষণ করে গলিতে গলিতে ঘুরছে বলে বোধ হচ্ছে না । বিপিন। পূৰ্ণবাবু, খবর কী । পূর্ণর প্রবেশ পূর্ণ। অত্যন্ত পুরোনো। কাল-পরশু যে খবর চলছিল। আজও তাই চলছে। শ্ৰীশ । কাল-পরশু শীতের হাওয়া বচ্ছিল, আজ বসন্তের হাওয়া দিয়েছে- এতে দুটাে-একটা নতুন খবরের আশা করা যেতে পারে । পূর্ণ। দক্ষিণের হাওয়ায় যে-সব খবরের সৃষ্টি হয় কুমার-সভার খবরের কাগজে তার স্থান নেই। তপোবনে একদিন অকালে বসন্তের হাওয়া দিয়েছিল, তাই নিয়ে কালিদাসের কুমারসম্ভব কাব্য রচনা হয়েছে- আমাদের কপালগুণে বসন্তের হাওয়ায় কুমার-অসম্ভব কাব্য হয়ে দাড়ায় । বিপিন । হয় তো হােক-না পূৰ্ণবাবু- সে কাব্যে যে দেবতা দগ্ধ হয়েছিলেন এ কাব্যে তাকে পুনজীবন দেওয়া যাক । পূর্ণ। এ কাব্যে চিরকুমার-সভা দগ্ধ হােক। যে দেবতা জ্বলেছিলেন তিনি জ্বালান। না, আমি ঠাট্টা করছি নে শ্ৰীশবাবু, আমাদের চিরকুমার-সভাটি একটি আস্ত জতুগৃহবিশেষ । আগুন লাগলে রক্ষে নেই। তার চেয়ে বিবাহিত সভা স্থাপন করো, শ্ৰীজাতি সম্বন্ধে নিরাপদ থাকবে । যে ইট পাজায় পুড়েছে তা দিয়ে ঘর তৈরি করলে আর পোড়বার ভয় থাকে না হে । শ্ৰীশ । যে-সে লোক বিবাহ করে বিবাহ জিনিসটা মাটি হয়ে গেছে পূৰ্ণবাবু। সেইজন্যেই তো কুমার-সভা । আমার যতদিন প্ৰাণ আছে ততদিন এ সভায় প্রজাপতির প্রবেশ নিষেধ । বিপিন । পঞ্চশর ? শ্ৰীশ । আসুন তিনি। একবার তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়ে গেলে, বাস, আর ভয় নেই। পূর্ণ। দেখো শ্ৰীশবাবুশ্ৰীশ । দেখব। আর কী । তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি। এক চোঁট দীর্ঘনিশ্বাস ফেলব, কবিতা আওড়াব, শনাকবলিয়ন্দ্ৰংসারিক্তপ্রকোষ্ঠ হয়ে যাব, তবে রীতিমত সন্ন্যাসী হতে পারব । আমাদের কবি লিখেছেননিশি না পোহাতে জীবনপ্ৰদীপ৷ জ্বালাইয়া যাও প্ৰিয়া, তোমার অনল দিয়া । কবে যাবে তুমি সমুখের পথে দীপ্ত শিখাটি বাহি আছি তাই পথ চাহি । পুড়িবে বলিয়া রয়েছে। আশায় আমার নীরব হিয়া আপন আঁধার নিয়া । নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ জ্বালাইয়া যাও প্রিয়া, পূর্ণ। ওহে শ্ৰীশবাবু, তোমার কবিটি তো মন্দ লেখে নি নিশি না পোহাতে জীবনপ্রদীপ জ্বালাইয়া যাও প্ৰিয়া,