পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা 8 রসিক। তা নন, সে আমি বেশ ঠাওর করেই দেখেছি। সেইজন্যেই তো নিৰ্ভয়ে এসেছিলুম। কিন্তু, তাদের সঙ্গে রাস্তার মধ্যে হিমে দাড়িয়ে অর্ধেক রাত পর্যন্ত রসালাপ করবার মতো উত্তাপ আমার শরীরে তো 6न्छ । শৈলবালা । তাদের সংসর্গে উত্তাপ সঞ্চয় করে নেবে। রসিক । সজীব গাছ যে সূর্যের তাপে প্ৰফুল্প হয়ে ওঠে মরা কাঠ তাতেই ফেটে যায়, যৌবনের উত্তাপ বুড়ো মানুষের পক্ষে ঠিক উপযোগী বোধ হয় না। শৈলবালা । কই, তোমাকে দেখে ফেটে যাবে বলে তো বোধ হচ্ছে না । রসিক । হৃদয়টা দেখলে বুঝতে পারতিস ভাই । শৈলবালা । কী বল রসিকদা । তোমারই তো এখন সব চেয়ে নিরাপদ বয়েস । যৌবনের দাহে তোমার दी। कद्धत । রসিক । শুষ্কেন্ধনে বহিরুপৈতি বৃদ্ধিম। যৌবনের দাহ বৃদ্ধকে পেলেই হুহুঃশব্দে জ্বলে ওঠেসেইজন্যেই তো বৃদ্ধস্য তরুণী ভাৰ্য বিপত্তির কারণ। কী আর বলব ভাই। : নীরবালার প্রবেশ রসিক । আগচ্ছ বরাদে দেবি । কিন্তু, বীর তুমি আমাকে দেবে কি না জানি নে, আমি তোমাকে একটি বর দেবার জন্যে প্ৰাণপাত করে। মরছি। শিব তো কিছুই করছেন না, তবু তোমাদের পুজো পাচ্ছেন ; আর এই-যে বুড়ো খেটে মরছে, এ কি কিছুই পাবে না। নীরবালা । শিব পান ফুল, তুমি পাবে তার ফল- তোমাকেই বরমাল্য দেব রসিকদাদা । রসিক । মাটির দেবতাকে নৈবেদ্য দেবার সুবিধা এই যে, সেটি সম্পূর্ণ ফিরে পাওয়া যায়— আমাকেও নিৰ্ভয়ে বরমাল্য দিতে পারিস, যখনই দরকার হবে তখনই ফিরে পাবি । তার চেয়ে ভাই, আমাকে একটা গলাবন্ধ বুনে দিস, বরমাল্যের চেয়ে সেটা বুড়ো মানুষের কাজে লাগবে । নীরবালা । তা দেব- একজোড়া পশমের জুতো বুনে রেখেছি সেও শ্ৰীচরণেষু হবে। রসিক । আহা, কৃতজ্ঞতা একেই বলে। কিন্তু নীরু, আমার পক্ষে গলাবন্ধই যথেষ্ট- আপাদমস্তক নাই হল, সেজন্যে উপযুক্ত লোক পাওয়া যাবে, জুতোটা তারই জন্যে রেখে দে । নীরবালা । আচ্ছা, তোমার বক্তৃতাও তুমি রেখে দাও । রসিক । দেখেছিস ভাই শৈল, আজকাল নীরুরও লিজা দেখা দিয়েছে— লক্ষণ খারাপ । শৈলবালা । নীরু, তুই করছিস কী । আবার এ ঘরে এসেছিস ? আজ যে এখানে আমাদের সভা বসবেএখনই কে এসে পড়বে, বিপদে পড়বি । রসিক । সেই বিপদের স্বাদ ও একবার পেয়েছে, এখন বারবার বিপদে পড়বার জন্যে ছট্‌ফটু করে বেড়াচ্ছে । নীরবালা । দেখো রসিকদাদা, তুমি যদি আমাকে বিরক্ত কর তা হলে গলাবন্ধ পাবে না বলছি। দেখো দেখি দিদি, তুমিও যদি রসিকদার কথায় ঐরকম করে হাস, তা হলে ওঁর আস্পর্ধা আরো বেড়ে যাবে। রসিক । দেখেছিস ভাই শৈল, নীরু আজকাল ঠাট্টও সইতে পারছে না, মন এত দুর্বল হয়ে পড়েছে।-- নীরুদিদি, কোনো কোনো সময় কোকিলের ডাক শ্রুতিকটু বলে ঠেকে এইরকম শাস্ত্ৰে আছে। তোর রসিকদাদার ঠাট্টাকেও কি তোর আজকাল কুহুতান বলে ভ্রম হতে লাগল। নীরবালা । সেইজন্যেই তো তোমার গলায় গলাবন্ধ জড়িয়ে দিতে চাচ্ছি- তানটা যদি একটু কমে । শৈলবালা । নীরু, আর ঝগড়া করিস নে- আয়, এখনই সবাই এসে পড়বে | [নীর ও শৈলের প্রস্থান পূর্ণর প্রবেশ রসিক। আসুন পূৰ্ণবাবু।