পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

BV8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী শ্ৰীশ । আপনার অক্ষমতার কথা শুনে দুঃখিত হলেম পূৰ্ণবাবু, আশা করি ক্রমে উন্নতি লাভ করতে পারবেন । বিপিন । (রসিককে জনান্তিকে টানিয়া) দুই বীরপুরুষে যুদ্ধ চলুক, এখন আসুন রসিকবাবু, আপনার সঙ্গে দুই-একটা কথা আছে। দেখুন, সেই খাতা সম্বন্ধে আর কোনো কথা উঠেছিল ? রসিক । অপরাধ করা মানবের ধর্ম আর ক্ষমা করা দেবীর- সে কথাটা আমি প্রসঙ্গক্রমে তুলেছিলেম।-- বিপিন । তাতে কী বললেন । রসিক । কিছু না বলে”। বিদ্যুতের মতো চলে গেলেন। বিপিন ।। চলে গেলেন ! রসিক । কিন্তু, সে বিদ্যুতে বাজ ছিল না। বিপিন । গর্জন ? ब्रानिक । उN3 दिन नां । বিপিন । তবে ? রসিক । এক প্রান্তে কিংবা অন্য প্রান্তে একটু হয়তো বর্ষণের আভাস ছিল । বিপিন। সেটুকুর অর্থ ? রসিক। কী জানি মশায়। অর্থও থাকতে পারে, অনৰ্থও থাকতে পারে। বিপিন। রসিকবাবু, আপনি কী বলেন আমি কিছু বুঝতে পারি নে। রসিক । কী করে বুঝবেন- ভারি শক্ত কথা । শ্ৰীশ । (নিকটে আসিয়া) কী কথা শক্ত মশায় । রসিক । এই বৃষ্টি-বজ্ৰ-বিদ্যুতের কথা । শ্ৰীশ। ওহে বিপিন, তার চেয়ে শক্ত কথা যদি শুনতে চাও তা হলে পূর্ণর কাছে যাও । বিপিন । শক্ত কথা সম্বন্ধে আমার খুব বেশি শখ নেই ভাই। শ্ৰীশ । যুদ্ধ করার চেয়ে সন্ধি করার বিদ্যেটা ঢের বেশি দুরূহ- সেটা তোমার আসে। দোহাই তোমার, পূর্ণকে একটু ঠাণ্ডা করে এসো গে। আমি বরঞ্চ ততক্ষণ রসিকবাবুর সঙ্গে বৃষ্টি-বজ্ৰ-বিদ্যুতের আলোচনা করে নিই । [বিপিনের প্রস্থান রসিকবাবু, ঐ-যে সেদিন আপনি যার নাম নৃপবালা বললেন তিনি— তিনি— তীর সম্বন্ধে বিস্তারিত করে কিছু বলুন। সেদিন চকিতের মধ্যে তার মুখে এমন একটি স্নিগ্ধভােব দেখেছি, তার সম্বন্ধে কৌতুহল কিছুতেই থামাতে পারছি নে । রসিক । বিস্তারিত করে বললে কৌতুহল আরো বেড়ে যাবে। এরকম কৌতুহল হবিষাকৃষ্ণবরত্মেব ভূয় এবভিবর্ধতে । আমি তো তাকে এতকাল ধরে জেনে আসছি, কিন্তু সেই কোমল হৃদয়ের স্নিগ্ধ মধুর ভাবটি আমার কাছে ক্ষণে ক্ষণে তন্নবতামুপৈতি । শ্ৰীশ । আচ্ছা, তিনি— আমি সেই নৃপবালার কথা জিজ্ঞাসা করছি— রসিক । সে আমি বেশ বুঝতেই পারছি। শ্ৰীশ । তা, তিনি- কী আর প্রশ্ন করব । তার সম্বন্ধে যা হয় কিছু বলুন-না- কাল কী বললেন, আজি সকালে কী করলেন, যত সামান্য হােক আপনি বলুন- আমি শুনি । রসিক । (শ্ৰীশের হাত ধরিয়া) বড়ো খুশি হলুম শ্ৰীশবাবু, আপনি যথার্থ ভাবুক বাটন- আপনি তাকে কেবল চকিতের মধ্যে দেখে এটুকু কী করে ধরতে পারলেন যে তার সম্বন্ধে তুচ্ছ কিছুই নেই। তিনি যদি বলেন রসিকদা, ঐ কেরোসিনের বাতিটা একটুখানি উসকে দাও” তো আমার মনে হয় যেন একটা নতুন কথা শুনলেম আদিকবির প্রথম অনুন্টুপ ছন্দের মতো। কী বলব শ্ৰীশবাবু, আপনি শুনলে হয়তো হাসবেন, সেদিন ঘরে ঢুকে দেখি নৃপবালা ছুঁচের মুখে সুতো পরাচ্ছেন, কোলের উপর বালিশের ওয়াড় পড়ে রয়েছে- আমার মনে হল এক আশ্চর্যাদৃশ্য। কতবার কত দর্জির দোকানের সামনে দিয়ে গেছি, কখনো মুখ তুলে দেখি নি, কিন্তু