পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻国3页 (S) অন্য বালকেরা বৃদ্ধিকে দেখিয়া যেরূপ খেলায় ভঙ্গ দিত এ তাহা না করিয়া চট্ৰ করিয়া আসিয়া যজ্ঞনাথের গায়ের কাছে চাদর ঝাড়া দিল এবং একটা বন্ধনমুক্ত গিরগিটি চাদর হইতে লাফাইয়া পড়িয়া তাহার গা বহিয়া অরণ্যাভিমুখে পলায়ন করিল— আকস্মিক ত্ৰাসে বৃদ্ধের সর্বশরীর কণ্টকিত হইয়া উঠিল। ছেলেদের মধ্যে ভারি একটা আনন্দের কলরব পড়িয়া গেল। আর কিছু দূর যাইতে-না-যাইতে যজ্ঞনাথের স্কন্ধ হইতে হঠাৎ তাহার গামছা অদৃশ্য হইয়া অপরিচিত বালকটির মাথায় পাগড়ির আকার ধারণ করিল। এই অজ্ঞাত মাণবকের নিকট হইতে এইপ্ৰকার নূতন প্ৰণালীর শিষ্টাচার প্রাপ্ত হইয়া যজ্ঞনাথ ভারি সন্তুষ্ট হইলেন । কোনো বালকের নিকট হইতে এরূপ অসংকোচ আত্মীয়তা তিনি বহুদিন পান নাই। বিস্তর ডাকাডাকি করিয়া এবং নানামত আশ্বাস দিয়া যজ্ঞনাথ তাহাকে কতকটা আয়ত্ত করিয়া লইলেন । জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী ।” সে বলিল, “নিতাই পাল |’ বাড়ি কোথায় ।” 'दक्लिव न् ।' ‘বাপের নাম কী ।” ‘বলিব না ।” 'न क्नि6 न ।।' কেন ।” “আমার বাপ আমাকে পাঠশালায় দিতে চায় ।” এরূপ ছেলেকে পাঠশালায় দেওয়া যে একটা নিস্ফল অপব্যয় এবং বাপের বিষয়বুদ্ধিহীনতার পরিচয় তাহা তৎক্ষণাৎ যজ্ঞনাথের মনে উদয় হইল । 曲 যজ্ঞনাথ বলিলেন, “আমার বাড়িতে আসিয়া থাকিবে ?” বালকটি কোনো আপত্তি না করিয়া এমনই নিঃসংকোচে সেখানে আশ্রয় গ্ৰহণ করিল যেন সে একটা পথপ্ৰান্তবতী তরুতল । কেবল তাহাঁই নয়, খাওয়া-পরা সম্বন্ধে এমনই অমানবদনে নিজের অভিপ্ৰায়মত আদেশ প্রচার করিতে লাগিল যেন পূর্বাহুেই তাহার পুরা দাম চুকাইয়া দিয়াছে। এবং ইহা লইয়া মাঝে মাঝে গৃহস্বামীর সহিত রীতিমত ঝগড়া করিত। নিজের ছেলেকে পরাস্ত করা সহজ, কিন্তু পরের ছেলের কাছে যজ্ঞনাথকে হার মানিতে হইল । যজ্ঞনাথের ঘরে নিতাই পালের এই অভাবনীয় সমােদর দেখিয়া গ্রামের লোক আশ্চর্য হইয়া গেল। বুঝিল, বৃদ্ধ আর বেশি দিন বঁাচিবে না এবং কোথাকার এই বিদেশী ছেলেটাকেই সমস্ত বিষয় দিয়া যাইবে । বালকের উপর সকলেরই পরম ঈর্ষা উপস্থিত হইল এবং সকলেই তাহার অনিষ্ট করিবার জন্য কৃতসংকল্প হইল। কিন্তু বৃদ্ধ তাঁহাকে বুকের পাজরের মতো ঢাকিয়া বেড়াইত । ছেলেটা মাঝে মাঝে চলিয়া যাইবে বলিয়া শাসাইত ! যজ্ঞনাথ তাহাকে প্রলোভন দেখাইতেন, ‘ভাই, তোকে আমি আমার সমস্ত বিষয়-আশয় দিয়া যাইব ।’ বালকের বয়স অল্প, কিন্তু এই আশ্বাসের মর্যাদা সে সম্পূর্ণ বুঝিতে পারিত। তখন গ্রামের লোকেরা বালকের বাপের সন্ধানে প্রবৃত্ত হইল । তাহারা সকলেই বলিল, “আহা, বাপ-মা’র মনে না-জানি কত কষ্টই হইতেছে। ছেলেটাও তো পাপিষ্ঠ কম নয় ।” বলিয়া ছেলেটার উদ্দেশে অকথ্য-উচ্চারণে গালি প্রয়োগ করিত। তাহার এতই বেশি বঁাজ যে, ন্যায় বুদ্ধির উত্তেজনা অপেক্ষা তাহাতে স্বার্থের গাত্রদাহ বেশি অনুভূত হইত।