পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(łRR इती-ज्ञानादर्वी বৃদ্ধ একদিন এক পথিকের কাছে শুনিতে পাইল, দামোদর পাল বলিয়া এক ব্যক্তি তাহার নিরুদ্দিষ্ট পুত্রের সন্ধান করিয়া বেড়াইতেছে, অবশেষে এই গ্রামের অভিমুখেই আসিতেছে। নিতাই এই সংবাদ শুনিয়া অস্থির হইয়া উঠিল ; ভাবী বিষয়-আশয় সমস্ত ত্যাগ করিয়া পলায়নোদ্যত হইল । যজ্ঞনাথ নিতাইকে বারংবার আশ্বাস দিয়া কহিলেন, “তোমাকে আমি এমন স্থানে লুকাইয়া রাখিব যে কেহই খুঁজিয়া পাইবে না । গ্রামের লোকেরাও না ।” বালকের ভারি কৌতুহল হইল ; কহিল, “কোথায় দেখাইয়া দাও-না।” যজ্ঞনাথ কহিলেন, “এখন দেখাইতে গেলে প্ৰকাশ হইয়া পড়িবে । রাত্রে দেখাইব ।” নিতাই এই নূতন রহস্য-আবিষ্কারের আশ্বাসে উৎফুল্ল হইয়া উঠিল । বাপ অকৃতকার্য হইয়া চলিয়া গেলেই বালকদের সঙ্গে বাজি রাখিয়া একটা লুকোচুরি খেলিতে হইবে এইরূপ মনে মনে সংকল্প করিল । কেহ খুঁজিয়া পাইবে না। ভারি মজা । বাপ আসিয়া সমস্ত দেশ খুঁজিয়া কোথাও তাহার সন্ধান পাইবে না, সেও খুব কৌতুক । মধ্যাহ্নে যজ্ঞনাথ বালককে গৃহে রুদ্ধ করিয়া কোথায় বাহির হইয়া গেলেন । ফিরিয়া আসিলে নিতাই তাহাকে প্রশ্ন করিয়া করিয়া অস্থির করিয়া তুলিল । সন্ধ্যা হইতে-না-হইতে বলিল, “চলো ।” যজ্ঞনাথ বলিলেন, “এখনো রাত্রি হয় নাই ।” নিতাই আবার কহিল, “রাত্রি হইয়াছে দাদা, চলো ।” যজ্ঞনাথ কহিলেন, “এখনো পাড়ার লোক ঘুমায় নাই ।” নিতাই মুহুর্ত অপেক্ষা করিয়াই কহিল, “এখন ঘুমাইয়াছে, চলো ।” রাত্ৰি বাড়িতে লাগিল । নিদ্রাতুর নিতাই বহুকষ্টে নিদ্রাসংবরণের প্রাণপণ চেষ্টা করিয়াও বসিয়া বসিয়া ঢুলিতে আরম্ভ করিল। রাত্রি দুই প্রহর হইলে যজ্ঞনাথ নিতাইয়ের হাত ধরিয়া নিদ্রিত গ্রামের অন্ধকার পথে বাহির হইলেন । আর-কোনো শব্দ নাই, কেবল থাকিয়া থাকিয়া কুকুর ঘেউ ঘেউ করিয়া ডাকিয়া উঠিল এবং সেই শব্দে নিকটে এবং দূরে যতগুলা কুকুর ছিল সকলে তারস্বরে যোগ দিল ; মাঝে মাঝে নিশাচর পক্ষী পদশব্দে ত্ৰস্ত হইয়া ঝটপট করিয়া বনের মধ্য দিয়া উড়িয়া গেল। নিতাই ভয়ে যজ্ঞনাথের হাত দৃঢ় করিয়া ধরিল । অনেক মাঠ ভাঙিয়া অবশেষে এক জঙ্গলের মধ্যে এক দেবতাহীন ভাঙা মন্দিরে উভয়ে গিয়া উপস্থিত হইল। নিতাই কিঞ্চিৎ ক্ষুঃস্বরে কহিল, “এইখানে ? যেরূপ মনে করিয়াছিল সেরূপ কিছুই নয় । ইহার মধ্যে তেমন রহস্য নাই । পিতৃগৃহত্যাগের পর এমন পোড়ো মন্দিরে তাহাকে মাঝে মাঝে রাত্রিযাপন করিতে হইয়াছে । স্থানটা যদিও লুকোচুরি খেলার পক্ষে মন্দ নয়, কিন্তু তবু এখান হইতে সন্ধান করিয়া বাহির করা নিতান্ত অসম্ভব নহে । যজ্ঞনাথ মন্দিরের মধ্য হইতে একখণ্ড পাথর উঠাইয়া ফেলিলেন । বালক দেখিল নিম্নে একটা ঘরের মতো এবং সেখানে প্ৰদীপ জ্বলিতেছে । দেখিয়া অত্যন্ত বিস্ময় এবং কৌতুহল হইল, সেইসঙ্গে ভয়ও করিতে লাগিল । একটি মই বাহিয়া যজ্ঞনাথ নামিয়া গেলেন, তাহার পশ্চাতে নিতাইও ভয়ে ভয়ে নামিল । নীচে গিয়া দেখিল চারি দিকে পিতলের কলস ৷ মধ্যে একটি আসন এবং তাহার সম্মুখে সিঁদুর, চন্দন, ফুলের মালা, পূজার উপকরণ । বালক কৌতুহল-নিবৃত্তি করিতে গিয়া দেখিল, ঘড়ায় কেবল টাকা এবং (GSKK | যজ্ঞনাথ কহিলেন, “নিতাই, আমি বলিয়াছিলাম আমার সমস্ত টাকা তোমাকে দিব । আমার অধিক কিছু নাই, সবে এই ক'টি মাত্র ঘাড়া আমার সম্বল। আজ আমি ইহার সমস্তই তোমার হাতে দিব ।” বালক লাফাইয়া উঠিয়া কহিল, “সমস্তই ! ইহার একটি টাকাও তুমি লইবে না ? “যদি লই তবে আমার হাতে যেন কুণ্ঠ হয় । কিন্তু একটা কথা আছে । যদি কখনো আমার নিরুদেশ নাতি গোকুলচন্দ্র কিংবা তাহার ছেলে কিংবা তাহার পৌত্র কিংবা তাহার প্রপৌত্র কিংবা তাহার বংশের কেহ আসে