পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ Qや> कुछ इन शि (क्शद अब आमादक निया आना-जाना गश्त पाठ शिश অনুভব করিলাম, আমার মশারির কাছে কে বসিল । নিরুপায় দেখিয়া আমি বেশ একটু উৎসাহের সহিত বলিলাম, “সেই ভালো । যাহাতে মন বেশ প্রফুল্প হইয়া উঠে এমন একটা-কিছু গল্প বলে ।” সে বলিল, “সব চেয়ে মজার কথা যদি শুনিতে চাও তো আমার জীবনের কথা বলি ।” গির্জার ঘড়িতে ঢং ঢেং করিয়া দুটা বাজিলযখন মানুষ ছিলাম এবং ছোটাে ছিলাম তখন এক ব্যক্তিকে যমের মতো ভয় করিতাম। তিনি আমার স্বামী । মাছকে বড়শি দিয়া ধরিলে তাহার যেমন মনে হয় আমারও সেইরূপ মনে হইত। অর্থাৎ, কোন-এক সম্পূর্ণ অপরিচিত জীব যেন বড়শিতে গাথিয়া আমাকে আমার স্নিগ্ধগভীর জন্মজলাশয় হইতে টান মারিয়া ছিনিয়া লইয়া যাইতেছে- কিছুতে তাহার হাত হইতে পরিত্রাণ নাই। বিবাহের দুই মাস পরেই আমার স্বামীর মৃত্যু হইল এবং আমার আত্মীয়স্বজনেরা আমার হইয়া অনেক বিলাপ-পরিতাপ করিলেন । আমার শ্বশুর অনেকগুলি লক্ষণ মিলাইয়া দেখিয়া শাশুড়িকে কহিলেন, শাস্ত্ৰে যাহাকে বলে বিষকন্যা এ মেয়েটি তাই । সে কথা আমার স্পষ্ট মনে আছে — শুনিতেছ ? কেমন লাগিতেছে।” আমি বলিলাম, ‘বেশ । গল্পের আরম্ভটি বেশ মজার ।” “তবে শোনো । আনন্দে বাপের বাড়ি ফিরিয়া আসিলাম । ক্রমে বয়স বাড়িতে লাগিল । লোকে আমার কাছে লুকাইতে চেষ্টা করিত, কিন্তু আমি নিজে বেশ জনিতাম আমার মতো রূপসী এমন যেখানে-সেখানে পাওয়া যায় না । তোমার কী মনে হয় ।” ‘খুব সম্ভব । কিন্তু আমি তোমাকে কখনো দেখি নাই ।” “দেখ নাই ? কেন । আমার সেই কঙ্কাল । হি হি হি হি ।- আমি ঠাট্টা করিতেছি । তোমার কাছে কী করিয়া প্ৰমাণ করিব যে, সেই দুটাে শূন্য চক্ষুকোটরের মধ্যে বড়ো বড়ো টানা দুটি কালো চোখ ছিল এবং রাঙা ঠোটের উপরে যে মৃদু হাসিটুকু মাখানো ছিল এখনকার অনাবৃতদন্তসার বিকট হাস্যের সঙ্গে তার কোনো তুলনাই হয় না— এবং সেই কয়খানা দীর্ঘ শুষ্ক অস্থিখণ্ডের উপর এত লালিত্য, এত লাবণ্য, যৌবনের এত কঠিন- কোমল নিটােল পরিপূর্ণতা প্রতিদিন প্রস্ফুটিত হইয়া উঠিতেছিল তোমাকে তাহা বলিতে গেলে হাসি পায় এবং রাগও ধরে । আমার সেই শরীর হইতে যে অস্থি-বিদ্যা শেখা যাইতে পারে তাহা তখনকার বড়ো বড়ো ডাক্তারেরাও বিশ্বাস করিত না । আমি জানি, একজন ডাক্তার তাহার কোনো বিশেষ বন্ধুর কাছে আমাকে কনক-চাপা বলিয়াছিলেন । তাহার অর্থ এই পৃথিবীর আর সকল মনুষ্যই অস্থি-বিদ্যা এবং শরীরতত্ত্বের দৃষ্টািস্তস্থল ছিল, কেবল আমি সৌন্দর্যরূপী ফুলের মতো ছিলাম। কনক-চাপার মধ্যে কি একটা কঙ্কাল আছে ? “আমি যখন চালিতাম তখন আপনি বুঝিতে পারিতাম যে একখণ্ড হীরা নড়াইলে তাহার চারি দিক হইতে যেমন আলো ঝকমক করিয়া উঠে, আমার দেহের প্রত্যেক গতিতে তেমনি সৌন্দর্যের ভঙ্গি নানা স্বাভাবিক হিল্লোলে চারি দিকে ভাঙিয়া পড়িত । আমি মাঝে মাঝে অনেকক্ষণ ধরিয়া নিজের হাত দুখানি নিজে দেখিতাম— পৃথিবীর সমস্ত উদ্ধত পৌরুষের মুখে রাশ লাগাইয়া মধুরভাবে বাগাইয়া ধরিতে পারে এমন দুইখানি হাত । সুভদ্রা যখন অর্জনকে লইয়া দৃপ্ত ভঙ্গিতে আপনার বিজয়রথ বিস্মিত তিন লোকের মধ্য দিয়া চালাইয়া লইয়া গিয়াছিলেন তাহার বোধ করি এইরূপ দুখানি অস্কুল সুডোল বাহু, আরক্ত করতল এবং লাবণ্যশিখার মতো অঙ্গুলি ছিল । “কিন্তু আমার সেই নির্লজ নিরাবরণ নিরাভরণ চিরবৃদ্ধ কঙ্কাল তোমার কাছে আমার নামে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়াছে । আমি তখন নিরুপায় নিরুত্তর ছিলাম । এইজন্য পৃথিবীর সব চেয়ে তোমার উপর আমার বেশি। রাগ । ইচ্ছা করে, আমার সেই ষোলো বৎসরের জীবন্ত, যৌবনতাপে উত্তপ্ত, আরক্তিম রূপখানি একবার তোমার চোখের সামনে দাড় করাই, বহুকালের মতো তোমার দুই চক্ষের নিদ্ৰা ছুটাইয়া দিই, তোমার অস্থিবিদ্যাকে অস্থির করিয়া দেশছাড়া করি।” আমি বলিলাম, “তোমার গা যদি থাকিত তো গা ভূঁইয়া বলিতাম, সে বিদ্যার লেশমাত্র আমার মাথায়