পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ናimi€5ዃጂ ○ ○○ মুক্তির উপায় ফকিরর্চাদ বাল্যকাল হইতেই গভীরপ্রকৃতি । বৃদ্ধসমাজে তাহাকে কখনোই বেমানান দেখাইত না । ঠাণ্ডা জল, হিম, এবং হাস্যপরিহাস তাহার একেবারে সহ্য হইত না । একে গভীর, তাহাতে বৎসরের মধ্যে অধিকাংশ সময়েই মুখমণ্ডলের চারিদিকে কালো পশমের গলাবন্ধ জড়াইয়া থাকাতে তাহাকে ভয়ংকর উচু দরের লোক বলিয়া বোধ হইত। ইহার উপরে, অতি অল্প বয়সেই তাহার ওষ্ঠাধর এবং গণ্ডস্থল প্রচুর গোফ-দাড়িতে আচ্ছন্ন হওয়াতে সমস্ত মুখের মধ্যে হাস্যবিকাশের স্থান আর তিলমাত্র অবশিষ্ট রহিল না । স্ত্রী হৈমবতীর বয়স অল্প এবং তাহার মন পার্থিব বিষয়ে সম্পূর্ণ নিবিষ্ট । সে বঙ্কিমবাবুর নভেল পড়িতে চায় এবং স্বামীকে ঠিক দেবতার ভাবে পূজা করিয়া তাহার তৃপ্তি হয় না । সে একটুখানি হাসিখুশি ভালোবাসে, এবং বিকচোমুখ পুষ্প যেমন বায়ুর আন্দোলন এবং প্রভাতের আলোকের জন্য ব্যাকুল হয় সেও তেমনি এই নবযৌবনের সময় স্বামীর নিকট হইতে আদর এবং হাস্যামোদ যথা পরিমাণে প্ৰত্যাশা করিয়া থাকে। কিন্তু, স্বামী তাহাকে অবসর পাইলেই ভাগবত পড়ায়, সন্ধ্যাবেলায় ভগবদগীতা শুনায়, এবং তাহার আধ্যাত্মিক উন্নতির উদ্দেশে মাঝে মাঝে শারীরিক শাসন করিতেও ক্ৰটি করে না । যেদিন হৈমবতীর বালিশের নীচে হইতে কৃষ্ণকান্তের উইল বাহির হয় সেদিন উক্ত লঘুপ্ৰকৃতি যুবতীকে সমস্ত রাত্রি অশ্রুপাত করাইয়া। তবে ফকির ক্ষান্ত হয় । একে নভেল-পাঠ, তাহাতে আবার পতিদেবকে প্রতারণা। যাহা হউক, অবিশ্রান্ত আদেশ অনুদেশ উপদেশ ধর্মনীতি এবং দণ্ডনীতির দ্বারা অবশেষে হৈমবতীর মুখের হাসি, মনের সুখ এবং যৌবনের আবেগ একেবারে নিষ্কৰ্ষণ করিয়া ফেলিতে স্বামীদেবতা সম্পূর্ণ কৃতকার্য হইয়াছিলেন । কিন্তু, অনাসক্ত লোকের পক্ষে সংসারে বিস্তর বিয়। পরে পরে ফকিরের এক ছেলে এক মেয়ে জন্মগ্রহণ করিয়া সংসারবন্ধন বাড়িয়া গেল। পিতার তাড়নায় এতবড়ো গভীরপ্রকৃতি ফকিরকেও আপিসে আপিসে কর্মের উমেদারিতে বাহির হইতে হইল, কিন্তু কৰ্ম জুটিবার কোনো সম্ভাবনা দেখা গেল না । তখন সে মনে করিল, “বুদ্ধদেবের মতো আমি সংসার ত্যাগ করিব।” এই ভাবিয়া একদিন গভীর রাত্রে ঘর ছাড়িয়া বাহির হইয়া গেল । R মধ্যে আর-একটি ইতিহাস বলা আবশ্যক । নবগ্রামবাসী ষষ্ঠীচরণের এক ছেলে । নাম মাখনলাল । বিবাহের অনতিবিলম্বে সস্তানাদি না হওয়াতে পিতার অনুরোধে এবং নূতনত্বের প্রলোভনে আর-একটি বিবাহ করেন । এই বিবাহের পর হইতে যথাক্রমে র্তাহার উভয় স্ত্রীর গর্ভে সাতটি কন্যা এবং একটি পুত্র জন্মগ্রহণ করিল। মাখন লোকটা নিতান্ত শৌখিন এবং চপল প্ৰকৃতি, কোনোপ্রকার গুরুতর কর্তব্যের দ্বারা আবদ্ধ হইতে নিতান্ত নারাজ। একে তো ছেলে।পুলের ভার, তাহার পরে যখন দুই কর্ণধার দুই কৰ্ণে ঝিকা মারিতে লাগিল, তখন নিতান্ত অসহ্য হইয়া সেও একদিন গভীর রাত্রে ডুব মারিল। বহুকাল তাহার আর সাক্ষাৎ নাই। কখনাে কখনো শুনা যায়, এক বিবাহে কিরূপ সুখ তাঁহাই পরীক্ষা করিবার জন্য সে কাশীতে গিয়া গোপনে আর-একটি বিবাহ করিয়াছে ; শুনা যায়, হতভাগ্য কথঞ্চিৎ শান্তি লাভ করিয়াছে। কেবল দেশের কাছাকাছি আসিবার জন্য মাঝে মাঝে তাহার মন উতলা হয়, ধরা পড়িবার 962 एनिड 9ान नां | V কিছুদিন ঘুরিতে ঘুরিতে উদাসীন ফকিরীচাঁদ নবগ্রামে আসিয়া উপস্থিত। পথপার্শ্ববতী এক বটবৃক্ষ-তলে বসিয়া নিশ্বাস ছাড়িয়া বলিল, “আহা, বৈরাগ্যমেবাভয়ং । দারাপুত্ৰ ধনজন কেহ কারও নয়। কা। তব কান্তা কন্তে পুত্ৰঃ ” বলিয়া এক গান জুড়িয়া দিল