পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NԵԳՀ রবীন্দ্র-রচনাবলী জ্বলেছে, সমস্ত বিশ্ব তার বন্দনাগান করছে। এতেও কি মানুষের দুটি হাত জোড় হবে না । তোমার না হতে পারে, কিন্তু সমস্ত মানবের অন্তরের মধ্যে তপস্বীদের কণ্ঠে স্তবগান উঠছে। অনন্তদেবের প্রাঙ্গণে সেই স্তবগান ধ্বনিত হচ্ছে, শোনো একবার শোনো ; সমস্ত মানবের ভিতরে, মানবের নিভৃত কন্দরে, যেখানে । ভক্ত বসে রয়েছেন সেইখানে তার কী বন্দনাকবনি উঠছে শোনো । এই অর্থহীন নিখিল মানবের কলোচ্ছাসের মধ্যে সেই একটি চিরন্তন বাণী কালে কালে যুগে যুগে জাগ্ৰত । তাকে বহন করবার জন্য বরপুত্ৰগণ আগে আগে চলেছেন, পথ দেখিয়ে দেখিয়ে চলেছেন । সে আজ নয় । আমরা অনন্ত পথের পথিক, আমরা যে কত যুগ ধরে চলেছি। ধারা গাচ্ছেন তাদের গান আমাদের কানে পীেচচ্ছে। তাই যদি না পৌছয়। তবে কী নিয়ে আমরা থাকব। দিনের পর দিন কি এমনি করেই চলে যাবে। এই কাড়াকড়ি মারামারি উদ্ভবৃত্তির মধ্যে কী জীবন কাটবে। এইজন্যেই কি জন্মেছিলুম। জীবনের পথে কি এইজন্যেই আমাদের চলতে বলা হয়েছে। এই-যে সংসারে জন্মেছি চলেছি, এখানে কত প্ৰেম কত আনন্দ যে ছড়িয়ে রয়েছে তা কি আমরা দেখছি না । কেবলই কি দেখব। পদমর্যাদা, টাকাকড়ি, বিষয়বিভব । আর-কিছুই নয় ? যিনি সকল মানবের বিধাতা একবার তার কাছে দাড়াবার কি ক্ষণমাত্র অবকাশ হবে না। পৃথিবীর এই মহাতীর্থে সেই জনগণের অধিনায়ককে কি প্ৰণাম নিবেদন করে যাব না । কিন্তু, ভয় নেই, ভয় নেই। তার তো শাসন নেই। তাই একবার হৃদয়ের সমস্ত শ্ৰীতিকে জাগ্ৰত করি । একবার সব নিয়ে আমাদের জীবনের একটি পরম প্ৰণাম রেখে দিয়ে যাব। জানি অন্যমনস্ক হয়ে আছি, তবু বলা যায় না- শুভক্ষণ যে কখন আসে তা বলা যায় না । তাই তো এখানে আসি । কী জানি যদি মন ফিরে যায় । তিনি যে ডাক ডাকছেন, তার প্রেমের ডাক, যদি শুভক্ষণ আসে- যদি শুনতে পাই । সমস্ত কোলাহলের মাঝখানে তাই কান খাড়া করে রয়েছি। এই মুহুর্তেই হয়তো তার ডাক আসতে পারে । এই মুহুর্তেই আমার জীবনপ্রদীপের যে শিখটি জ্বলে নি সেই শিখটি জ্বলে উঠতে পারে। আমাদের সত্য প্রার্থনা, যা চিরদিন অন্তরের এক প্রান্তে অপেক্ষা করে রয়েছে, সেই প্রার্থনা আজ জাগুক : আসতো মা সদগময় । সত্যকে চাই । সমস্ত মিথ্যাজাল ছিন্ন করে দাও । এই প্রার্থনা জগতে যত মানব জন্মগ্রহণ করেছে সকলের চিরকালের প্রার্থনা । এই প্রার্থনাই মানুষের সমাজ গড়েছে, সাম্রাজ্য রচনা করেছে, শিল্পসাহিত্যের সৃষ্টি করেছে । আজ এই প্রার্থনা আমাদের জীবনে ধ্বনিত হয়ে উঠুক। ৭ পৌষ ১৩২০, রাত্রি A SSSR o অগ্রসর হওয়ার আহবান স্টপফোর্ড ব্লকের সঙ্গে যখন আমার আলাপ হয়েছিল তখন তিনি আমাকে বললেন, যে, কোনো-একটা বিশেষ সাম্প্রদায়িক দলের কথা বা বিশেষ দেশের বা কালের প্রচলিত রূপক ধর্মমত বা বিশ্বাসের সঙ্গে আমার কবিতা জড়িত নয় বলে আমার কবিতা পড়ে তাদের আনন্দ ও উপকার হয়েছে। তার কারণ, খৃস্টধর্ম যে কাঠামোর ভিতর দিয়ে এসে যে রূপটি পেয়েছে তার সঙ্গে বর্তমান জ্ঞানবিজ্ঞানের অনেক জায়গাতেই অনৈক্য হচ্ছে। তাতে করে পুরোনো ধর্মবিশ্বাস একেবারে গোড়া ঘেঁষে উন্মুলিত করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিদিন যা বিশ্বাস করি বলে মানুষকে স্বীকার করতে হয় তা স্বীকার করা সে দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত লোকের পক্ষে অসম্ভব । অনেকের পক্ষে চার্চে যাওয়া অসাধ্য হয়েছে। ধর্ম মানুষের জীবনের বাইরে পড়ে রয়েছে ; লোকের মনকে তা আর আশ্রয় দিতে পারছে না। সেইজন্য ফরাসীস বিদ্রোহ থেকে আরম্ভ করে দেখা গিয়েছে যে, ধর্মকে আঘাত দেবার উদ্যম সেখানকার বুদ্ধিমান লোকদের পেয়ে বসেছে। অথচ ধর্মকে আঘাতমাত্র দিয়ে মানুষ আশ্রয় পাবে কেমন করে । তাতে কিছুদিনের মতো মানুষ প্ৰবৃত্ত থাকতে পারে, কিন্তু তাতে ধর্ম সম্বন্ধে মানুষের অন্তরে যে স্বাভাবিক পিপাসা রয়েছে তার কোনোই তৃপ্তি হয় না। এখনকার কালে সেই পিপাসার দাবি জেগে উঠেছে। তার নানা লক্ষণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। নাস্তিকতা নিয়ে যেদিন জ্ঞানী লোকেরা দম্ভ করতেন সেদিন চলে গিয়েছে। ধর্মকে আবৃত করে অন্ধ সংস্কারগুলা যখন