পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮌ©Ꮼ রবীন্দ্র-রচনাবলী । শ্ৰীমতী। নদীর সব ঢেউকেই সমুদ্র আজ একভাকে ডেকেছে। পূর্ণ চাদ উঠল – এ কী। তোমার হাতে যে আংটি দেখি । কেমন লাগছে যে স্বগের মন্দারকুড়ি তো ধুলোর দামে বিকিয়ে গেল না ? মালতী। তবে খুলে বলি—তুমি সব কথা বুঝবে। শ্ৰীমতী । অনেক কেঁদে বোঝবার শক্তি হয়েছে। মালতী। তিনি ধনী, আমরা দরিদ্র । দূর থেকে চুপ করে তাকে দেখেছি। একদিন নিজে এসে বললেন “মালতীকে আমার ভালো লাগে।” বাবা বললেন, “মালতার সৌভাগ্য।” সব আয়োজন সারা হল যেদিন এলেন তিনি দ্বারে। বরের বেশে নয় ভিক্ষুর বেশে । কাষায়বস্ত্র, হাতে দণ্ড। বললেন, “যদি দেখা হয় তো মুক্তির পথে, এখানে নয়।”—দিদি, কিছু মনে ক’রো না—এখনো চেখে জল আসছে, মন ষে ছোটো । শ্ৰীমতী। চোখের জল বয়ে যাক না । মুক্তিপথের ধুলো ওই জলে মরবে। মালতী। প্রণাম করে বললেম, “আমার তো বন্ধন ক্ষয় হয়নি। যে আংটি পরাবে কথা দিয়েছিলে সেটি দিয়ে যাও।” এই সেই আংটি । ভগবানের আরতিতে এটি ষেদিন আমার হাত থেকে তার পায়ে খসে পড়বে সেইদিন মুক্তির পথে দেখা হবে। শ্ৰীমতী । কত মেয়ে ঘর বেঁধেছিল, আজ তারা ঘর ভাঙল। কত মেয়ে চীবর পরে পথে বেরিয়েছে, কে জানে সে কি পথের টানে, না পথিকের টানে ? কতবার হাত জোড় করে মনে মনে প্রার্থনা করি—বলি, “মহাপুরুষ, উদাসীন থেকে না । আজ ঘরে ঘরে নারীর চোখের জলে তুমিই বন্যা বইয়ে দিলে, তুমিই তাদের শাস্তি দাও।” রাজবাড়ির মেয়েরা ওই আসছেন । বাসব নন্দ রত্নাবলী অজিত মল্লিকা ভদ্রার প্রবেশ বাসবী। এ মেয়েটি কে, দেখি দেখি । চুল চুড়া করে বেঁধেছে, অলকে দিয়েছে জবা । নন্দ, দেখে যাও, আকদের মালা দিয়ে বেণী কী করম উচু করে জড়িয়েছে। গলায় বুঝি কুঁচফলের হার ? শ্ৰীমতী, এ কোথা থেকে এল ? শ্ৰীমতী। গ্রাম থেকে । ওর নাম মালতী। 羈 * রত্নাবলী। পেয়েছ একটি শিকার! ওকে শিষ্য করবে বুঝি ? আমাদের উদ্ধার করতে পারলে না, এখন গ্রামের মেয়ে ধরে মুক্তির ব্যবসা চালাবে ! শ্ৰীমতী। গ্রামের মেয়ের মুক্তির ভাবন কী ; ওখানে স্বর্গের হাতের কাজ ঢাকা পড়েনি—না ধুলায়, না মণিমাণিক্যে—স্বৰ্গ তাই আপনি ওদের চিনে নেয়।