পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૯8 রবীন্দ্র-রচনাবলী উপার্জনে মন দেওয়া গেল। গবর্মেন্ট আপিসে চাকরি করিবার বয়স গেছে, অন্ত আপিসে প্রবেশ করিবারও ক্ষমতা নাই । অনেক ভাবিয়া বই লিখিতে লাগিলাম । বঁশের নল ফুটা করিলে তাহাতে তেল রাখা যায় না, জল রাখা যায় না, তাহার ধারণাশক্তি মূলেই থাকে না ; তাহাতে সংসারের কোনো কাজই হয় না, কিন্তু ফু দিলে বিনা খরচে বঁশি বাজে ভালো । আমি স্থির জানিতাম, সংসারের কোনো কাজেই যেহতভাগ্যের বুদ্ধি খেলে না, সে নিশ্চয়ই ভালো বই লিখিবে। সেই সাহসে একখানা প্রহসন লিখিলাম, লোকে ভালো বলিল এবং রঙ্গভূমিতে অভিনয় হইয়া গেল । সহসা যশের আস্বাদ পাইয়া এমনি বিপদ হইল, প্রহসন আর কিছুতেই ছাড়িতে পারি না । সমস্তদিন ব্যাকুল চিস্তান্বিত মুখে প্রহসন লিখিতে লাগিলাম। প্রভা আসিয়া আদর করিয়া স্নেহসহাস্তে জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, নাইতে যাবে না ?” η φ" আমি হুংকার দিয়া উঠিলাম, “এখন যা, এখন যা, এখন বিরক্ত করিসনে ৷” বালিকার মুখখানি বোধ করি একটি ফুৎকারে নির্বাপিত প্রদীপের মতো অন্ধকার হইয়া গিয়াছিল ; কখন সে অভিমানবিল্ফারিত-হৃদয়ে নীরবে ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল আমি জানিতেও পারি নাই । দাসীকে তাড়াইয়া দিই, চাকরকে মারিতে যাই, ভিক্ষুক সুর করিয়া ভিক্ষা করিতে আসিলে তাহাকে লাঠি লইয়া তাড়া করি। পথপার্থেই আমার ঘর হওয়াতে যখন কোনো নিরীহ পান্থ জানলার বাহির হইতে আমাকে পথ জিজ্ঞাসা করে, আমি তাহাকে জাহান্নম নামক একটা অস্থানে যাইতে অনুরোধ করি। হায়, কেহই বুঝিত না, আমি খুব একটা মজার প্রহসন লিখিতেছি। কিন্তু যতটা মজা এবং যতটা যশ হইতেছিল সে পরিমাণে টাকা কিছুই হয় নাই। তখন টাকার কথা মনেও ছিল না। এদিকে প্রভার যোগ্য পাত্রগুলি অন্ত ভদ্রলোকদের কন্যাদায় মোচন করিবার জন্ত গোকুলে বাড়িতে লাগিল, আমার তাহাতে খেয়াল छ्लि नां । পেটের জালা না ধরিলে চৈতন্ত হইত না, কিন্তু এমন সময় একটা সুযোগ জুটিয়া গেল। জাহিরগ্রামের এক জমিদার একখানি কাগজ বাহির করিয়া আমাকে তাহার বেতনভোগী সম্পাদক হইবার জন্য অনুরোধ করিয়া পাঠাইয়াছেন। কাজটা স্বীকার করিলাম। দিনকতক এমনি প্রতাপের সহিত লিখিতে লাগিলাম যে, পথে বাহির হইলে লোকে আমাকে অঙ্গুলি নির্দেশ করিয়া দেখাইত এবং আপনাকে মধ্যাহৃতপনের মতে দুর্নিরীক্ষ্য বলিয়া বোধ হইত।