পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ } ২৬৯ নিবারণ মিথ্যা আশ্বাস দিয়া বলিত, “আমি আর একটা ভালো বাড়ির সন্ধানে আছি, শীঘ্ৰ বাড়ি বদল করিব।” 轉 | শৈলবালা বলিত, “কেন, ওই তো পাশে আর একটা ঘর আছে।” শৈলবালা তাহার পূর্ব-প্রতিবেশিনীদের দিকে কখনো মুখ তুলিয়া চাহে নাই। নিবারণের বর্তমান দুরবস্থায় ব্যথিত হইয় তাহার একদিন দেখা করিতে আসিল ; শৈলবালা ঘরে খিল দিয়া বসিয়া রছিল, কিছুতেই দ্বার খুলিল না। তাহারা চলিয়। গেলে রাগিয়া, কাদিয়া, উপবাসী থাকিয়া, হিস্টিরিয়া করিয়া পাড়া মাথায় করিল। এমনতরো উৎপাত প্রায় ঘটিতে লাগিল । অবশেষে শৈলবালার শারীরিক সংকটের অবস্থায় গুরুতর পীড়া হইল, এমন কি, গর্ভপাত হুইবার উপক্রম হুইল । নিবারণ হরমুন্দরীর দুই হাত ধরিয়া বলিল, “তুমি শৈলকে বাচাও।” হরসুন্দরী দিন নাই রাত্রি নাই শৈলবালার সেবা করিতে লাগিল । তিলমাত্র ক্রটি হইলে শৈল তাহাকে দুর্বাক্য বলিত, সে একটি উত্তরমাত্র করিত না । শৈল কিছুতেই সাগু খাইতে চাহিত না, বাটিসুদ্ধ ছুড়িয়া ফেলিত, জরের সময় কাচ আমের অম্বল দিয়া ভাত খাইতে চাহিত । না পাইলে রাগিয়া কাদিয়া অনর্থপাত করিত। হরসুন্দরী তাহাকে “লক্ষ্মী আমার,” “বোন আমার,” “দিদি আমার” বলিয়া শিশুর মতো ভুলাইতে চেষ্টা করিত। 疊 কিন্তু শৈলবালা বঁচিল না। সংসারের সমস্ত সোহাগ আদর লইয়া পরম অসুখ ও অসন্তোষে বালিকার ক্ষুদ্র অসম্পূর্ণ ব্যর্থ জীবন নষ্ট হইয়া গেল। தும் <g পরিচ্ছেদ্ধ নিবারণের প্রথমে খুব একটা আঘাত লাগিল, পরক্ষণেই দেখিল তাহার একটা মস্ত বাধন ছিড়িয়া গিয়াছে। শোকের মধ্যেও হঠাৎ তাহার একটা মুক্তির আনন্দ বোধ হইল। হঠাৎ মনে হইল এতনি তাহার বুকের উপর একটা দুঃস্বপ্ন চাপিয়া ছিল। চৈতন্ত হইয়া মুহূর্তের মধ্যে জীবন নিরতিশয় লঘু হইয়া গেল। মাধবীলতাটির মতো এই যে কোমল জীবনপাশ ছিড়িয়া গেল, এই কি তাহার আদরের শৈলবালা । হঠাৎ নিশ্বাস টানিয়া দেখিল, না, সে তাহার উৰন্ধনরজ্জ্ব। আর তাহার চিরজীবনের সঙ্গিনী হুরসুন্দরী ? দেখিল, সেই তো তাহার সমস্ত সংসার একাকিনী অধিকার করিয়া তাহার জীবনের সমস্ত সুখদুঃখের স্মৃতিমন্দিরের