পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭৬ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি একটুখানি নড়িয়া-চড়িয়া পাশবালিশ আরও একটু সবলে জড়াইবা রিয়া কহিলাম, তার পরে ? দিদিমা কহিলেন, তার পরে ছেলেটি পুথি হাতে প্রতিদিন পাঠশালে যায়। এমনি করিয়া গুরুমহাশয়ের কাছে নানা বিদ্যা শিখিয়া ছেলেটি ক্রমে যত বড়ো হইয়া উঠিতে লাগিল ততই তাহার সহপাঠীরা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, ওই যে সাতমহলা বাড়িতে তোমাকে লইয়া থাকে সেই মেয়েটি তোমার কে হয়। - ব্রাহ্মণের ছেলে তো ভাবিয়া অস্থির, কিছুতেই ঠিক করিয়া বলিতে পারে না, মেয়েটি তাহার কে হয়। একটু একটু মনে পড়ে একদিন সকালে রাজবাড়ির দ্বারের সম্মুখে শুকনা কাঠ কুড়াইতে গিয়াছিল—কিন্তু সেদিন কী একটা মস্ত গোলমালে কাঠ কুড়ানো হইল না। সে অনেক দিনের কথা, সে কি কিছু মনে আছে। এমন করিয়া চারি-পাচ বৎসর যায়। ছেলেটিকে রোজই তাহার সঙ্গীরা জিজ্ঞাস করে, “আচ্ছা ওই যে সাতমহল বাড়িতে পরমারূপসী মেয়েটি থাকে ও তোমার কে হয়। ” ব্রাহ্মণ একদিন পাঠশালা হইতে মুখ বড়ো বিমর্ষ করিয়া আসিয়া রাজকন্যাকে কহিল, “আমাকে আমার পাঠশালার প'ড়োর প্রতিদিন জিজ্ঞাসা করে—ওই ষে সাতমহলা বাড়িতে যে পরমাসুন্দরী মেয়েটি থাকে সে তোমার কে হয়। আমি তাহার কোনো উত্তর দিতে পারি না । তুমি আমার কে হও, বলে ।” রাজকন্যা বলিল, “আজিকার দিন থাকৃ, সে-কথা আর একদিন বলিব ।” ব্রাহ্মণের ছেলে প্রতিদিন পাঠশালা হইতে আসিয়া জিজ্ঞাসা করে, “তুমি আমার কী হও ।” রাজকন্যা প্রতিদিন উত্তর করে, “সে-কথা আজ থাকৃ, আর একদিন বলিব ।” এমনি করিয়া আরও চার-পাঁচ বৎসর কাটিয়া যায়। শেষে ব্রাহ্মণ একদিন আসিয়া বড়ে রাগ করিয়া বলিল, “আজ যদি তুমি না বল তুমি আমার কে হও, তবে আমি তোমার এই সাতমহলা বাড়ি ছাড়িয়া চলিয়া যাইব ।” তখন রাজকন্যা কহিলেন, “আচ্ছা কাল নিশ্চয়ই বলিব ।” পরদিন ব্রাহ্মণতনয় পাঠশালা হইতে ঘরে আসিয়াই রাজকন্যাকে বলিল, “আজ বলিবে বলিয়াছিলে, তবে বলে ।” o রাজকন্যা বলিলেন, “আজ রাত্রে আহার করিয়া তুমি যখন শয়ন করিবে তখন বলিব ।” o ব্রাহ্মণ বলিল, “আচ্ছা।” বলিয়া স্বর্যাস্তের অপেক্ষায় প্রহর গনিতে লাগিল ।