পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ २br> কুরিদের বাড়িতে ঢুকিয় তাহার গা ছম ছম করিয়া উঠিল। দেখিলেন ঘরে প্রদীপ জালা হয় নাই। অন্ধকার দাওয়ায় দুই-চারিট অন্ধকার মূর্তি অস্পষ্ট দেখা যাইতেছে। রহিয়া রহিয়া দাওয়ার এক কোণ হইতে একটা অফুট রোন উচ্ছসিত হইয় উঠতেছে- এবং ছেলেটা যত মা মা বলিয়া কাদিয়া উঠিতে চেষ্টা করিতেছে ছিদাম তাহার মুখ চাপিয়া ধরিতেছে। রামলোচন কিছু ভীত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “দুখি, আছিল নাকি।” দুখি এতক্ষণ প্রস্তরমূর্তির মতো নিশ্চল হইয়া বসিয়া ছিল, তাহার নাম ধরিয়া ডাকিবামাত্র একেবারে অবোধ বালকের মতো উচ্ছ্বসিত হইয়া কাদিয়া উঠিল। ছিদাম তাড়াতাড়ি দাওয়া হইতে অঙ্গনে নামিয়া চক্রবর্তীর নিকটে আসিল । চক্রবর্তী জিজ্ঞাসা করিলেন, “মাগীরা বুঝি ঝগড়া করিয়া বসিয়া আছে? আজ তে সমস্তদিনই চীৎকার শুনিয়াছি।” এতক্ষণ ছিদাম কিংকর্তব্য কিছুই ভাবিয়া উঠিতে পারে নাই। নানা অসম্ভব গল্প তাহার মাথায় উঠিতেছিল। আপাতত স্থির করিয়াছিল, রাত্রি কিঞ্চিৎ অধিক হইলে মৃতদেহ কোথাও সরাইয়া ফেলিবে । ইতিমধ্যে যে চক্রবর্তী আসিয়া উপস্থিত হইবে এ সে মনেও করে নাই। ফস করিয়া কোনো উত্তর জোগাইল না । বলিয়া ফেলিল, “হা, আজ খুব ঝগড়া হইয়া গিয়াছে।” চক্রবর্তী দাওয়ার দিকে অগ্রসর হইবার উপক্রম করিয়া বলিল, “কিন্তু সে জন্ত দুখি বঁগদে কেন রে ।” ছিদাম দেখিল আর রক্ষা হয় না, হঠাৎ বলিয়া ফেলিল, “ঝগড়া করিয়া ছোটোবউ বড়ে বউয়ের মাথায় এক দায়ের কোপ বসাইয়া দিয়াছে।” wo উপস্থিত বিপদ ছাড়া যে আর কোনো বিপদ থাকিতে পারে এ-কথা সহজে মনে হয় না। ছিদাম তখন ভাবিতেছিল, ভীষণ সত্যের হাত হইতে কী করিয়া রক্ষা পাইব। মিথ্যা যে তদপেক্ষ ভীষণ হইতে পারে তাহা তাহার জ্ঞান হইল না। রামলোচনের প্রশ্ন শুনিবামাত্র তাহার মাথায় তৎক্ষণাৎ একটা উত্তর জোগাইল এবং তৎক্ষণাৎ বলিয়া ফেলিল । f রামলোচন চমকিয়া উঠিয়া কহিল, “অ্যা ! বলিস কী ! মরে নাই তো !” ছিদাম কছিল, “মরিয়াছে।” বলিয়া চক্রবর্তীর পা জড়াইয়া ধরিল। চক্রবর্তী পালাইবার পথ পায় না। ভাবিল, রাম রাম, সন্ধ্যাবেলায় এ কী বিপদেই পড়িলাম। আদালতে সাক্ষ্য দিতে দিতেই প্রাণ বাহির হইয়া পড়িবে। ছিদাম טאא-שכי