পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

રન્ટ - রবীন্দ্র-রচনাবলী ছিদাম তাহার যুবতী স্ত্রীকে একটু বিশেষ ভালোবাসিত। উভয়ে ঝগড়াও হইত, ভাবও হইত, কেহ কাহাকেও পরাস্ত করিতে পারিত না । আর একটি কারণে উভয়ের মধ্যে বন্ধন কিছু সুদৃঢ় ছিল। ছিদাম মনে করিত চন্দরা যেরূপ চটুল চঞ্চল প্রকৃতির স্ত্রীলোক তাহাকে যথেষ্ট বিশ্বাস নাই, আর চন্দরা মনে করিত আমার স্বামীটির চতুর্দিকেই দৃষ্টি, তাহাকে কিছু কষাকষি করিয়া না বাধিলে কোনদিন হাতছাড়া হইতে আটক নাই। উপস্থিত ঘটনা ঘটবার কিছুকাল পূর্বে হইতে স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে ভারি একটা গোলযোগ চলিতেছিল। চন্দরা দেখিয়াছিল তাহার স্বামী কাজের ওজর করিয়া মাঝে মাঝে দূরে চলিয়া যায়, এমন কি দুই-একদিন অতীত করিয়া আসে, অথচ কিছু উপার্জন করিয়া আনে না। লক্ষণ মন্দ দেখিয়া সে-ও কিছু বাড়াবাড়ি দেখাইতে লাগিল । যখন-তখন ঘাটে যাইতে আরম্ভ করিল এবং পাড়া পর্যটন করিয়া আসিয়া কাশী মজুমদারের মেজো ছেলেটির প্রচুর ব্যাখ্যা করিতে লাগিল। ছিদামের দিন এবং রাত্রিগুলির মধ্যে কে যেন বিষ মিশাইয়া দিল । কাজেকর্মে কোথাও একদণ্ড গিয়া সুস্থির হইতে পারে না । একদিন ভাজকে আসিয়া ভারি ভৎসনা করিল। সে হাত নাড়িয়া ঝংকার দিয়া অনুপস্থিত মৃত পিতাকে সম্বোধন করিয়া বলিল, “ও মেয়ে ঝড়ের আগে ছোটে উহাকে আমি সামলাইব ! আমি জানি ও কোনদিন কী সর্বনাশ করিয়া বসিবে।” চন্দরা পাশের ঘর হইতে আসিয়া আস্তে আস্তে কহিল, “কেন দিদি তোমার এত ভয় কিসের।” এই দুই জায়ে বিষম দ্বন্দ্ব বাধিয়া গেল । - ছিদাম চোখ পাকাইয়া বলিল, “এবার যদি কখনো শুনি তুই একলা ঘাটে গিয়াছিল তোর হাড় গুড়াইয়া দিব।” চন্দরা বলিল, “তাহ হইলে তো হাড় জুড়ায়।” বলিয়া তৎক্ষণাৎ বাহিরে যাইবার উপক্রম করিল। ছিদাম এক লম্ফে তাহার চুল ধরিয়া টানিয়া ঘরে পুরিয়া বাহির হইতে দ্বার রুদ্ধ করিয়া দিল । org কর্মস্থান হইতে সন্ধ্যাবেলায় ফিরিয়া আসিয়া দেখে ঘর খোলা, ঘরে কেহ নাই। চন্দর তিনটে গ্রাম ছাড়াইয়া একেবারে তাহার মামার বাড়ি গিয়া উপস্থিত হইয়াছে। ছিদাম সেখান হইতে বহুকষ্টে অনেক সাধ্যসাধনায় তাহাকে ঘরে ফিরাইয়া আনিল, কিন্তু এবার পরাস্ত মানিল। দেখিল এক অঞ্জলি পারদকে মুষ্টির মধ্যে শক্ত করিয়া ধরা যেমন দুঃসাধ্য এই মুষ্টিমেয় স্ত্রীটুকুকেও কঠিন করিয়া ধরিয়া রাখা তেমনি অসম্ভব— ও যেন দশ আঙুলের ফাক দিয়া বাহির হইয় পড়ে।