পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*覇●5獲 ՀՆ-Գ রামলোচন কছিল, “খুনের অনতিবিলম্বেই আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়াছিলাম। সাক্ষী ছিদাম আমার নিকট সমস্ত স্বীকার করিয়া আমার পা জড়াইয়া ধরিয়া কহিল, বউকে কী করিয়া উদ্ধার করিব আমাকে যুক্তি দিন। আমি ভালো মন্দ কিছুই বলিলাম না। সাক্ষী আমাকে বলিল, আমি যদি বলি আমার বড়ো ভাই ভাত চাহিয়া ভাত পায় নাই বলিয়া রাগের মাথায় স্ত্রীকে মারিয়াছে, তাহা হইলে সে কি রক্ষা পাইবে।” আমি কহিলাম, খবরদার হারামজাদা, আদালতে একবর্ণও মিথ্যা বলিস না—এতবড়ো মহাপাপ আর নাই' ইত্যাদি। * রামলোচন প্রথমে চন্দরাকে রক্ষা করিবার উদেশে অনেকগুলা গল্প বানাইয় তুলিয়াছিল, কিন্তু যখন দেখিল, চন্দর নিজে বাকিয় দাড়াইয়াছে, তখন ভাবিল, ওরে বাপ রে শেষকালে কি মিথ্যা সাক্ষ্যের দায়ে পড়িব । যেটুকু জানি সেটুকু বলা ভালো, এই মনে করিয়া রামলোচন যাহা জানে তাঁহাই বলিল। বরঞ্চ তাহার চেয়েও কিছু বেশি বলিতে ছাড়িল না। ডেপুটি ম্যাজিস্টেট সেশনে চালান দিলেন। - ইতিমধ্যে চাষবাস হাটবাজার হাসিকান্না পৃথিবীর সমস্ত কাজ চলিতে লাগিল । এবং পূর্ব পূর্ব বৎসরের মতো নবীন ধান্তক্ষেত্রে শ্রাবণের অবিরল বৃষ্টিধারা বর্ধিত হইতে লাগিল । পুলিস আসামী এবং সাক্ষা লইয়া আদালতে হাজির। সম্মুখবর্তী মুন্সেফের কোর্টে বিস্তর লোক নিজ নিজ মোকদ্দমার অপেক্ষায় বসিয়া আছে। রন্ধনশালার পশ্চাদ্বতী একটি ভোবার অংশ-বিভাগ লইয়া কলিকাতা হইতে এক উকিল আসিয়াছে এবং তদুপলক্ষে বাদীর পক্ষে উনচল্লিশজন সাক্ষী উপস্থিত আছে। কতশত লোক আপন আপন কড়াগও হিসাবের চুলচেরা মীমাংসা করিবার জন্য ব্যগ্র হইয়া আসিয়াছে, জগতে আপাতত তদপেক্ষ গুরুতর আর কিছুই উপস্থিত নাই এইরূপ তাহাদের ধারণা । ছিদাম বাতায়ন হইতে এই অত্যন্ত ব্যস্তসমস্ত প্রতিদিনের পৃথিবীর দিকে একদৃষ্টি চাহিয়া আছে, সমস্তই স্বপ্নের মতো বোধ হইতেছে । কম্পাউণ্ডের বৃহৎ বটগাছ হইতে একটি কোকিল ভাকিতেছে—তাহদের কোনোরূপ আইন-আদালত নাই। চন্দরী জজের কাছে কহিল, “ওগো সাহেব, এক কথা আর বারবার কতবার করিয়া বলিব ।” জজসাহেব তাহাকে বুঝাইয়া বলিলেন, “তুমি ধে অপরাধ স্বীকার করিতেছ তাহার শাস্তি কী জানো ?” চন্দরা কহিল, “না।”