পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ । 蚌 "Фреко ঈশানের চোখ দিয়া দরদর করিয়া অশ্র পড়িতে লাগিল। সে কী বলিবে, কী করিবে কিছুই ভাবিয়া পাইল না। তাহার মেয়ে এবং জামাই যেন সাম্রাজ্যের যুবরাজ । এবং যুবরাজমহিষী; এই সমস্ত পাটের বস্তার মধ্যে তাছাদের উপযুক্ত সিংহাসন কেমন করিয়া নির্মিত হইতে পারে ইহাই যেন তাহার দিশাহারা বুদ্ধি ঠিক করিয়া উঠিতে পারিল না । * তাহার পর আহারের ব্যাপার –সেও এক চিস্ত। দরিদ্র কেরানি নিজ হন্তে ভাল ভাতে ভাত পাক করিয়া খায়—আজ এই এমন আনন্দের দিনে সে কী করিবে, কী খাওয়াইবে । মৃন্ময়ী কহিল, “বাবা, আজ আমরা সকলে মিলিয়া রাধিব ।” অপূর্ব এই প্রস্তাবে সাতিশয় উৎসাহ প্রকাশ করিল। ঘরের মধ্যে স্থানাভাব, লোকাভাব, অন্নাভাব, কিন্তু ক্ষুদ্র ছিদ্র হইতে ফোয়ার যেমন চতুগুণ বেগে উখিত হয় তেমনি দরিদ্র্যের সংকীর্ণ মুখ হইতে আনন্দ পরিপূর্ণ ধারায় উচ্ছ্বলিত হইতে লাগিল । 顧 এমনি করিয়া তিন দিন কাটিল। দুইবেল নিয়মিত স্টীমার আসিয়া লাগে, কত লোক, কত কোলাহল ; সন্ধ্যাবেলায় নদীতীর একেবারে নির্জন হুইয়া যায়, তখন কী অবাধ স্বাধীনতা । এবং তিন জনে মিলিয়া নানাপ্রকার জোগাড় করিয়া, ভুল করিয়া, এক করিতে আর-এক করিয়া তুলিয়া রাধাবাড়া। তাহার পরে মৃন্ময়ীর বলয়বংকৃত স্নেহহন্তের পরিবেশনে শ্বশুর জামাতার একত্রে আহার এবং গৃহিণীপনার সহস্র ক্রটি প্রদর্শনপূর্বক মৃন্ময়ীকে পরিহাস ও তাহ লইয়া বালিকার আনন্দকলহ এবং মৌখিক অভিমান। অবশেষে অপূর্ব জানাইল আর অধিক দিন থাকা উচিত হয় না। মৃন্ময়ী করুণস্বরে আরও কিছু দিন সময় প্রার্থনা করিল। ঈশান কহিল, “কাজ নাই।” বিদায়ের দিন কস্তাকে বুকের কাছে টানিয়া তাহার মাথায় হাত রাখিয়া অশ্ৰগদগদকণ্ঠে ঈশান কহিল, “ম, তুমি শ্বশুরঘর উজ্জল করিয়া লক্ষ্মী হইয়া থাকিয়ে । কেহ যেন আমার মিসুর কোনো দোষ না ধরিতে পারে।” *, মৃন্ময়ী কাদিতে কাদিতে স্বামীর সহিত বিদায় হইল। এবং ঈশান সেই দ্বিগুণ নিরানন্দ সংকীর্ণ ঘরের মধ্যে ফিরিয়া গিয়া দিনের পর দিন, মাসের পর মাস নিয়মিত মাল ওজন করিতে লাগিল । ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ । এই অপরাধিযুগল গৃহে ফিরিয়া আসিলে মা অত্যন্ত গভীরভাবে রছিলেন, কোনো কথাই কহিলেন না। কাহারও ব্যবহারের প্রতি এমন কোনো দোষারোপ করিলেন