পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

# গল্পগুচ্ছ ?・? মৃন্ময়ী এ-প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বাহুল্য বোধ করিয়া ঘুমাইতে লাগিল। কিন্তু অপুর্বর, ঘুম হইল না, বালিশ উচু করিয়া ঠেসান দিয়া বসিয়া রইল । অনেক রাত্রে হঠাৎ চাদ উঠিয়া চাদের আলো বিছানার উপর জাসিয়া পড়িল । অপূর্ব সেই আলোকে মৃন্ময়ীর দিকে চাহিয়া দেখিল । চাহিয়া চাহিয়া মনে হইল যেন রাজকন্যাকে কে রুপার কাঠ ছোয়াইয়া অচেতন করিয়া রাখিয়া গিয়াছে। একবার কেবল সোনার কাঠি পাইলেই এই নিদ্রিত আত্মাটিকে জগাইয়া তুলিয়া মালা বদল করিয়া লওয়া যায়। রুপার কাঠ হাস্ত, আর সানার কাঠি অশ্রজল । ভোরের বেলায় অপূর্ব মৃন্ময়ীকে জাগাইয়া দিল—কহিল, “মৃন্ময়ী, আমার যাইবার সময় হইয়াছে । চলো তোমাকে তোমার মার বাড়ি রাখিয়া আসি ।” মৃন্ময়ী শয্যাত্যাগ করিয়া উঠিয় দাড়াইলে অপূর্ব তাহার দুই হাত ধরিয়া কহিল, “এখন আমার একটি প্রার্থনা আছে । আমি অনেক সময় তোমার অনেক সাহায্য করিয়াছি আজ যাইবার সময় তাহার একটি পুরস্কার দিবে ?” মুন্ময়ী বিস্মিত হইয়া কহিল, “কী ।” অপূর্ব কহিল, “তুমি ইচ্ছা করিয়া ভালোবাসিয়া আমাকে একটি চুম্বন দাও।” অপূৰ্বর এই অদ্ভূত প্রার্থন এবং গভীর মুখভাব দেখিয়া মৃন্ময়ী হাসিয়া উঠিল। হাস্ত সংবরণ করিয়া মুখ বাড়াইয়া চুম্বন করিতে উষ্ঠত হইল - কাছাকাছি গিয়া আর পারিল না, খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল এমন দুইবার চেষ্টা করিয়া অবশেষে নিরস্ত হইয়া মুখে কাপড় দিয়া হাসিতে লাগিল। শাসনচ্ছলে অপূর্ব তাহার কর্ণমূল ধরিয়া নাড়িয়া দিল । - o অপূর্বর বড়ো কঠিন পণ । দস্তাবৃত্তি করিয়া কাড়িয়া লুটিয়া লওয়া সে আত্মাবমাননা মনে করে। সে দেবতার ন্যায় সগৌরবে থাকিয়া স্বেচ্ছানীত উপহার চায়, নিজের হাতে কিছুই তুলিয়া লইবে না। মৃন্ময়ী আর হাসিল না। তাহাকে প্রত্যুষের আলোকে নির্জন পথ দিয়া তাহার মার বাড়ি রাখিয়া অপূর্ব গৃহে আসিয়া মাতাকে কহিল, “ভাবিয়া দেখিলাম, বউকে আমার সঙ্গে কলিকাতায় লইয়া গেলে আমার পড়াশুনার ব্যাঘাত হইব, সেখানে উহারও কেহ সঙ্গিনী নাই। তুমি তো তাহাকে এ বাড়িতে রাখিতে চাও না, আমি তাই তাহার মার বাড়িতেই রাখিয়া আসিলাম।” সুগভীর অভিমানের মধ্যে মাতাপুত্রের বিচ্ছেদ হইল। డిy =\రీa مقصد