পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী و ه نكا ১ সপ্তম পরিচ্ছেদ মার বাড়িতে আসিয়া মৃন্ময়ী দেখিল কিছুতেই আর মন লাগিতেছে না । সে বাড়ির আগাগোড়া যেন বদল হইয়া গেছে। সময় আর কাটে না । কী করিবে কোথায় যাইবে কাহার সহিত দেখা করিবে ভাবিয়া পাইল না । মৃন্ময়ীর হঠাৎ মনে হইল যেন সমস্ত গৃহে এবং সমস্ত গ্রামে কেহ লোক নাই । যেন মধ্যাহ্নে স্বর্যগ্রহণ হইল। কিছুতেই বুঝিতে পারিল না, আজ কলিকাতায় চলিয়া যাইবার জন্য এত প্রাণপণ ইচ্ছা করিতেছে, কাল রাত্রে এই ইচ্ছা কোথায় ছিল ; কাল সে জানিত না যে, জীবনের যে-অংশ পরিহার করিয়া যাইবার জন্য এত মন-কেমন করিতেছিল তৎপূর্বেই তাহার সম্পূর্ণ স্বাদ-পরিবর্তন হইয়া গিয়াছে। গাছের পঙ্কপত্রের ন্যায় আজ সেই বৃন্তচু্যত অতীত জীবনটাকে ইচ্ছাপূর্বক অনায়াসে দূরে ছুড়িয়া ফেলিল । গল্পে শুনা যায়, নিপুণ অস্ত্রকার এমন স্বল্প তরবারি নির্মাণ করিতে পারে যে, তদ্বারা মানুষকে দ্বিখণ্ড করিলেও সে জানিতে পারে না, অবশেষে নাড় দিলে দুই অর্ধখণ্ড ভিন্ন হইয়া যায়। বিধাতার তরবারি সেইরূপ স্ব ক্ষু, কখন তিনি মুন্ময়ীর বাল্য ও যৌবনের মাঝখানে আঘাত করিয়াছিলেন সে জানিতে পারে নাই ; আজ কেমন করিয়া নাড়া পাইয়া বাল্য-অংশ যৌবন হইতে বিচু্যত হইয়া পড়িল এবং মৃন্ময়ী বিস্মিত হইয়া ব্যথিত হইয়া চাহিয়া রহিল । মাতৃগৃহে তাহার সেই পুরাতন শয়নগৃহকে আর আপনার বলিয়া মনে হইল না, সেখানে যে থাকিত সে হঠাৎ আর নাই । এখন হৃদয়ের সমস্ত স্মৃতি সেই আর একটা বাড়ি, আর একটা ঘর, আর একটা শয্যার কাছে গুনগুন করিয়া বেড়াইতে লাগিল । মৃন্ময়ীকে আর কেহ বাহিরে দেখিতে পাইল না । তাহার হাস্যধ্বনি আর শুনা যায় না । রাখাল তাহাকে দেখিলে ভয় করে । খেলার কথা মনেও আসে না । মৃন্ময়ী মাকে বলিল, “মা, আমাকে শ্বশুরবাড়ি রেখে আয় ।” এদিকে, বিদায়কালীন পুত্রের বিষন্ন মুখ স্মরণ করিয়া অপূর্বর মার হৃদয় বিদীর্ণ হইয়া যায়। সে যে রাগ করিয়া বউকে বেহানের বাড়ি রাখিয়া আসিয়াছে ইহা তাহার মনে বড়োই বিধিতে লাগিল । হেনকালে একদিন মাথায় কাপড় দিয়া মৃন্ময়ী মানমুখে শাশুড়ীর পায়ের কাছে পড়িয়া প্রণাম করিল। শাশুড়ী তৎক্ষণাৎ ছলছলনেত্রে তাহাকে বক্ষে চাপিয়া ধরিলেন । মুহূর্তের মধ্যে উভয়ের মিলন হইয়া গেল। শাশুড়ী বধুর মুখের দিকে চাহিয়া আশ্চর্ষ