পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○> o রবীন্দ্র-রচনাবলী -- ভগ্নী কহিল, “ভয়ংকর লোকটাই বটে। ছেলেমানুষ হঠাৎ দেখলে আচমকা আঁতকে উঠতে পারে।” এই ভাবে হাস্তপরিহাস চলিতে লাগিল, কিন্তু অপূর্ব অত্যন্ত বিমর্ষ হইয়া রহিল। কোনো কথা তাহার ভালো লাগিতেছিল না। তাহার মনে হইতেছিল, সেই যখন ম কলিকাতায় আসিলেন তখন মুন্ময়ী ইচ্ছা করিলে অনায়াসে র্তাহার সহিত আসিতে পারিত। বোধ হয়, মা তাহাকে সঙ্গে আনিবার চেষ্টাও করিয়াছিলেন, কিন্তু সে সম্মত হয় নাই। এ-সম্বন্ধে সংকোচবশত মাকে কোনো প্রশ্ন করিতে পারিল না—সমস্ত মানবজীবন এবং বিশ্বরচনাটা আগাগোড়া ভ্রান্তিসংকুল বলিয়া বোধ হইল । আহারান্তে প্রবলবেগে বাতাস উঠিয়া বিষম বৃষ্টি আরম্ভ হইল । இ. ভগ্নী কহিল, “দাদা, আজ আমাদের এইখানেই থেকে যাও।” দাদা কহিল, “না বাড়ি যেতে হবে ; কাজ আছে।” ভগ্নীপতি কহিল, “রাত্রে তোমার আবার এত কাজ কিসের । এখানে একরাত্রি থেকে গেলে তোমার তো কারও কাছে জবাবদিহি করতে হবে না, তোমার ভাবন কী।” অনেক পীড়াপীড়ির পর বিস্তর অনিচ্ছাসত্ত্বে অপূর্ব সে-রাত্রি থাকিয়া যাইতে সম্মত इझेल । 亨 ভগ্নী কহিল, “দাদা তোমাকে প্রাস্ত দেখাচ্ছে, তুমি আর দেরি করে না, চলে গুতে চলো ।” অপূৰ্বরও সেই ইচ্ছা । শয্যাতলে অন্ধকারের মধ্যে একলা হইতে পারিলে বাচে, কথার উত্তরপ্রত্যুত্তর করিতে ভালো লাগিতেছে না। শয়নগৃহের দ্বারে আসিয়া দেখিল ঘর অন্ধকার । ভগ্নী কহিল, “বাতাসে আলো নিবে গেছে দেখছি, তা আলে৷ এনে দেব কি দাদা ।” இ. অপূর্ব কহিল, “না দরকার নেই, আমি রাত্রে আলো রাখিনে ৷” ভগ্নী চলিয়া গেলে অপূর্ব অন্ধকারে সাবধানে খাটের অভিমুখে গেল। খাটে প্রবেশ করিতে উদ্যত হইতেছে এমন সময়ে হঠাৎ বলয়নিক্কণশব্দে একটি সুকোমল বাহুপাশ তাহাকে মুকঠিন বন্ধনে বাধিয়া ফেলিল এবং একটি পুষ্পপুটতুল্য ওষ্ঠাধর দস্থ্যর মতো আসিয়া পড়িয়া অবিরল অশ্রজলসিক্ত আবেগপূর্ণ চুম্বনে তাহাকে বিস্ময় প্রকাশের অবসর দিল না। অপূর্ব প্রথমে চমকিয়া উঠিল তাহার পুর বুঝিতে পারিল অনেকদিনের একটি হাস্তবাধায় অসম্পন্ন চেষ্টা আঞ্জ অশ্রজলধারায় সমাপ্ত হইল । আশ্বিন, ১৩ • •