পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্চ 4 לס\ بييتي বিপিনবাবু এই ঘটনায় মনে মনে ষে খুশি হন নাই তাহ বলা যায় না । আমরা যাহাকে শিকার করিতে চাহি সে যে আমাদিগকে থাবা মারিতে আসিবে এরূপ বজাতি এবং বে-আদবি অসহ্য । যাহা হউক, বেটা যেরূপ বদমায়েস সেইরূপ তাহার উচিত শাস্তি হুইবে । বিপিনের অন্তঃপুরের মেয়ের আজিকার ঘটনা শুনিয়া কণ্টকিত হইয়া উঠিলেন। সকলেই বলিলেন, মাগো, কোথাকার বজাত হারামজাদা বেটা । তাহার উচিত শাস্তির সম্ভাবনায় তাহারা অনেকটা সাত্বনা লাভ করিলেন । এদিকে সেই সন্ধ্যাবেলায় বিধবার অন্নহীন পুত্রহীন গৃহ মৃত্যুর অপেক্ষাও অন্ধকার হইয়া গেল। এই ব্যাপারটা সকলেই ভুলিয়া গেল, আহারাদি করিল, শয়ন করিল, নিদ্রা দিল,—কেবল একটি বৃদ্ধার কাছে পৃথিবীর সমস্ত ঘটনার মধ্যে এইটেই সর্বাপেক্ষী বৃহৎ হইয়া উঠিল, অথচ ইহার সহিত যুদ্ধ করিবার জন্ত সমস্ত পৃথিবীতে আর কেহই নাই, কেবল দীপহীন কুটিরপ্রান্তে কয়েকখানি জীর্ণ অস্থি এবং একটি হতাশ্বাস ভীত হৃদয় । 囑 চতুর্থ পরিচ্ছেদ ইতিমধ্যে দিন তিনেক অতিবাহিত হইয়া গেছে। কাল ডেপুটি ম্যাজিস্টেটের নিকট বিচারের দিন নির্দিষ্ট হইয়াছে। বিপিনকেও সাক্ষ্য দিতে যাইতে হইবে। ইতিপূর্বে জমিদারকে কখনো সাক্ষ্যমঞ্চে দাড়াইতে হয় নাই - কিন্তু বিপিনের ইহাতে কোনো আপত্তি নাই। 唱 f পরদিন যথাসময়ে পাগড়ি পরিয়া ঘড়ির চেন ঝুলাইয়া পালকি চড়িয়া মহাসমারোহে বিপিনবাবু কাছারিতে গিয়া উপস্থিত হইলেন। এজলাসে আজ আর লোক ধরে না। এতবড়ো হুজুক আদালতে অনেকদিন ঘটে নাই । যখন মকদম উঠিতে আর বড়ো বিলম্ব নাই, এমন সময় একজন বরকন্দ্বাজ আসিয়া বিপিনবাবুর কানে কানে কী একটা কথা বলিয়া দিল—তিনি তটস্থ হইয়া আবশুক আছে বলিয়া বাহিরে চলিয়া আসিলেন। বাহিরে আসিয়া দেখিলেন, কিছু দূরে এক বটতলায় তাহার বৃদ্ধ পিতা দাড়াইয়া আছেন। খালি পা, গায়ে একখানি নামাবলি, হাতে হরিনামের মালা, রুশ শরীরট যেন স্নিগ্ধ জ্যোতির্ময়। ললাট হইতে একটি শাস্ত করুণা বিশ্বে বিকীর্ণ হইতেছে। বিপিন চাপকন জোৰা এবং স্ট্রাট প্যান্টলুন লইয়া কষ্টে তীহাকে প্রণাম করিলেন। মাখার পৗগড়িটি নাসাপ্রান্তে নামির জাসিল, ঘড়িটি জেব হইতে বাছির হইয় পড়িল।