পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ * |9)పె পোহাইল। শয়নগৃহের মেঝের উপরে বসিয়া খাতটি স্বাকড়িয়া ধরিয়া উচ্চৈঃস্বরে মুর করিয়া পড়িত এবং লিখিত। এমনি করিয়া অনেক গদ্য পদ্য সংগ্ৰহ হইল । - দ্বিতীয় বৎসরে মধ্যে মধ্যে দুটি-একটি স্বাধীন রচনা দেখা দিতে লাগিল ; অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত সারবান—ভূমিকা নাই, উপসংহার নাই। দুটা-একটা উদ্ধৃত করিয়া দেওয়া যাইতে পারে। . খাতায় কথামালার ব্যাঘ্র ও বকের গল্পটা যেখানে কপি করা আছে, তাহার নিচে এক জায়গায় একটা লাইন পাওয়া গেল, সেটা কথামালা কিংবা বর্তমান বঙ্গসাহিত্যের আর কোথাও ইতিপূর্বে দেখা যায় নাই। সে লাইনটি এই—যশিকে আমি খুব ভালোবালি । কেহ না মনে করেন আমি এইবার একটা প্রেমের গল্প বানাইতে বসিয়াছি। যশি পাড়ার কোনো একাদশ কিংবা দ্বাদশবৰ্ষীয় বালক নহে। বাড়ির একটি পুরাতন দাসী, তাহার প্রকৃত নাম যশোদা । কিন্তু যশির প্রতি বালিকার প্রকৃত মনোভাব কী এই এক কথা হইতে তাহার কোনো দৃঢ় প্রমাণ পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে যিনি বিশ্বাসযোগ্য ইতিহাস লিখিতে ইচ্ছা করিবেন, তিনি এই খাতাতেই দু-পাত অস্তরে পূর্বোক্ত কথাটির সুস্পষ্ট প্রতিবাদ দেখিতে পাইবেন । Af এমন একটা-আধটা নয়, উমার রচনায় পদে পদে পরম্পরবিরোধিতা দোষ লক্ষিত হয়। একস্থলে দেখা গেল—হরির সঙ্গে জন্মের মতো আড়ি । (হরিচরণ নয়, হরিদাসী, বিদ্যালয়ের সহপাঠক । ) তার অনতিদূরেই এমন কথা আছে যাহা হইতে সহজেই বিশ্বাস জন্মে যে, হরির মতো প্রাণের বন্ধু তাহার আর ত্রিভুবনে নাই। তাহার পরবৎসরে বালিকার বয়স যখন নয় বৎসর, তখন একদিন সকালবেলা হইতে তাহাজের বাড়িতে সানাই বাজিতে লাগিল। উমার বিবাহ। বরটির নাম প্যারীমোহন, গোবিন্দলালের সহযোগী লেখক । বয়স যদিও অধিক নয় এবং লেখাপড় কিঞ্চিৎ শেখা আছে, তথাপি নব্যভাব তার মনে কিছুমাত্র প্রবেশ করিতে পারে নাই। এইজন্ত পাড়ার লোকেরা তাকে ধন্য ধন্ত করিত এবং গোবিন্দলাল তাহার অনুকরণ করিতে চেষ্টা করিত, কিন্তু সম্পূর্ণ কৃতকার্ধ হইতে পারে নাই। উমা বেনারসি শাড়ি পরিয়া ঘোমটায় ক্ষুদ্র মুখখানি আবৃত করিয়া কাদিতে কাদিতে শ্বশুরবাড়ি গেল। ম৷ বলিয়া দিলেন, “বাছ, শাশুড়ীর কথা মানিয়া চলিস, ঘরকন্নার কাজ করিস, লেখাপড়া লইয়া থাকিসনে ৷” গোবিন্দলাল বলিয়। দিলেন, “দেখিল, সেখানে দেয়ালে আঁচড় কাটিয়া বেড়াসনে ; সে