পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঞ্চয় .." அஇஅ তাই তো আজ বসন্তশেষের সমস্ত ফুলগন্ধ একেবারে আমার মনের উপরে আসিয়া এমন করিয়া ছড়াইয়া পড়িতেছে। তাই তো আমার খোলা জানালা পার হইয়া বিশ্বআকাশের অতিথিরা এমন অসংকোচে আমার ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিতেছে। আলো যে ওই অস্তরীক্ষে কী সুন্দর করিয়া দাড়াইয়াছে, আর পৃথিবী ওই তার পায়ের নীচে আঁচল বিছাইয়া কী নিবিড় হর্ষে পুলকিত হুইয়া পড়িয়া আছে তাহ যেন এত কাল দেখি নাই। এই আজ আমি যাহা দেখিতেছি এ যে মৃত্যুর পটে আঁকা জীবনের ছবি ; যেখানে বৃহৎ, যেখানে বিরাম, যেখানে নিস্তন্ধ পূর্ণতা, তাহারই উপরে দেখিতেছি এই সুন্দরী চঞ্চলতার অবিরাম নূপুরনিৰুণ, তাহার নানা রঙের আঁচলখানির এই উচ্ছ্বসিত ঘূর্ণাগতি। আমি দেখিতেছি বাহিরের দরজায় লক্ষ লক্ষ চন্দ্রস্থর্ব গ্ৰহতারা আলো হাতে ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছে, আমি দেখিতেছি মানুষের ইতিহাসে জন্ম-মৃত্যু উত্থান-পতন ঘাতপ্রতিঘাত উচ্চকলরবে উতলা হইয়া ফিরিতেছে— কিন্তু সেও তো ওই বাহিরের প্রাঙ্গণে । আমি দেখিতেছি ওই যে রাজার বাড়ি তাহাতে মহলের পর মহুল উঠিয়াছে, তাহার চুড়ার উপরে নিশান মেঘ ভেদ করিয়া কোথায় চলিয়া গিয়াছে সে আয়ু চোখে দেখা যায় না। কিন্তু চাবি যখন লাগিল, দ্বার যখন খুলিল—ভিতর বাড়িতে একি দেখা যায় ! সেখানে আলোয় তো চোখ ঠিকরিয়া পড়ে না, সেখানে সৈন্যসামস্তে ঘর জুড়িয়া তো দাড়ায় নাই ! সেখানে মণি নাই মানিক নাই, সেখানে চন্দ্রাতপে তো মুক্তার ঝালর ঝুলিতেছে না। সেখানে ছেলের ধুলাবালি ছড়াইয়া নিৰ্ভয়ে খেলা করিতেছে, তাহাতে দাগ পড়িবে এমন রাজআস্তরণ তো কোথাও বিছানো নাই। সেখানে যুবকযুবতীর মালা বদল করিবে বলিয়া আঁচল ভরিয়া ফুল তুলিয়াছে কিন্তু রাজ্যেষ্ঠানের মালী আসিয়া তো কিছুমাত্র হাকডাক করিতেছে না। বৃদ্ধ সেখানে কর্মশালার বহু কালিমাচিহ্নিত অনেক দিনের জীর্ণ কাপড়খানা ছাড়িয়া ফেলিয়৷ পট্টবসন পরিতেছে, কোথাও তো কোনো নিষেধ দেখি না । ইহাই আশ্চর্ষ যে এত ঐশ্বর্ধ এত প্রতাপের মাঝখানটিতে সমস্ত এমন সহজ, এমন আপন! ইহাই আশ্চৰ্য, পা তুলিতে ভয় হয় না, হাত তুলিতে হাত কাপে না । ইহাই আশ্চর্ষ যে এমন অভেদ্য রহস্তময় জ্যোতির্ময় লোকলোকাস্তরের মাঝখানে এই অতি ক্ষুদ্র মানুষের জন্মমৃত্যু মুখদুঃখ খেলাধুলা কিছুমাত্র ছোটো নয়,সামান্ত নয়, অসংগত নয়—সে জন্য কেহ তাহাকে একটুও লজ্জা দিতেছে না। সবাই বলিতেছে তোমার ওইটুকু খেলা, ওইটুকু হাসিকান্নার জন্তই এত আয়োজন—ইহার যতটুকুই তুমি গ্রহণ করিতে পার ততটুকুই সে তোমারই –ষতদূর পর্যন্ত তুমি দেখিতেছ সে তোমারই দুই চক্ষুর ধন,—ষতদূর পর্যন্ত তোমার মন দিয়া বেড়িয়া লইতে পার সে