পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঞ্চয় । , €రివ, এই জঙ্কই শিল্প-সাহিত্যে ভাবব্যঞ্জনার ( suggestiveness ) এত আদর। এই ভাবব্যঞ্জনার দ্বারা রূপ আপনার একান্ত ব্যক্ততা যথাসম্ভব পরিহার করে বলিয়াই অব্যক্তের অভিমুখে আপনাকে বিলীন করে বলিয়াই মানুষের হৃদয় তাহার দ্বারা প্রতিহত হয় না। রাজ্যেষ্ঠানের সিংহদ্বারটা কেমন ? তাহা যতই অভ্ৰভেদী হ’ক, তাহার কারনৈপুণ্য যতই থাক, তবু সে বলে না আমাতে আসিয়াই সমস্ত পথ শেষ হইল। আসল গন্তব্য স্থানটি যে তাহাকে অতিক্রম করিয়াই আছে এই কথাই তাহার জানাইবার কথা । এই জন্ত সেই তোরণ কঠিন পাথর দিয়া যত দৃঢ় করিয়াই তৈরি হউক না কেন, সে আপনার মধ্যে অনেকখানি ফাক রাখিয়া দেয় । বস্তুত সেই ফাকটাকেই প্রকাশ করিবার জন্য সে খাড়া হইয়া দাড়াইয়া আছে। সে যতটা আছে তাহার চেয়ে নাই অনেক বেশি। তাহার সেই “নাই” অংশটাকে যদি সে একেবারে ভরাট করিয়া দেয় তবে সিংহোষ্ঠানের পথ একেবারেই বন্ধ। তবে তাহার মতো নিষ্ঠুর বাধা আর নাই। তবে সে দেয়াল হইয় উঠে এবং যাহারা মূঢ় তাহারা মনে করে এইটেই দেখিবার জিনিস, ইহার পশ্চাতে আর কিছুই নাই ; এবং যাহারা সন্ধান জানে তাহার। ইহাকে অতি স্কুল একটা মূর্তিমান বাহুল্য জানিয়া অন্যত্র পথ খুজিতে বাহির হয়। রূপমাত্রই এইরূপ সিংহদ্বার। সে আপনার ফাকটা লইয়াই গৌরব করিতে পারে। সে আপনাকেই নির্দেশ করিলে বঞ্চন করে, পথ নির্দেশ করিলেই সত্য কথা বলে। সে ভূমাকে দেখাইবে, আনন্দকে প্রকাশ করিবে, কী শিল্প সাহিত্যে কী জগৎ-স্বষ্টিতে এই তাহার একমাত্র কাজ । কিন্তু সে প্রায় মাঝে মাঝে দুরাকাজক্ষাগ্ৰস্ত দাসের মতো আপনার প্রভূর সিংহাসনে চড়িয়া বসিবার আয়োজন করে। তখন তাহার সেই স্পর্ধায় আমরা যদি যোগ দিই তবে বিপদ ঘটে—তখন তাহাকে নষ্ট করিয়া ফেলাই তাহাব সম্বন্ধে আমাদের কর্তব্য-ত সে স্বতই প্রিয় হ’ক, এমন কি, সে যদি আমার নিজেরই অহংক্কপট হয় তবুও। বস্তুত রূপ ধাহা তাহাকে তাহার চেয়ে বড়ো করিয়া জানিলেই সেই বড়োকে হারানো হয়। মামুষের সাহিত্য শিল্পকলায় হৃদয়ের ভাব রূপে ধরা দেয় বটে কিন্তু রূপে বদ্ধ হয় না । এই জন্য সে কেবলই নব নব রূপের প্রবাহ স্বষ্টি করিতে থাকে। তাই প্রতিভাকে বলে “নবনবোন্মেষশালিনী বুদ্ধি।” প্রতিভা রূপের মধ্যে চিত্তকে ব্যক্ত করে কিন্তু বন্দী করে না—এই জন্ত নব নব উন্মেষের শক্তি তাহার থাকা চাই । মনে করা যাক পূর্ণিমা রাত্রির শুভ্ৰ সৌন্দৰ দেখিয়া কোনো কবি বর্ণনা করিতেছেন যে, মুরলোকে নীলকান্তমণিময় প্রাঙ্গণে মুরাঙ্গনার নম্বনের নবমন্ত্রিকায় ফুলশষ্য রচনা করিতেছেন। এই বর্ণন যখন আমরা পড়ি তখন আমরা জানি পূর্ণিমা রাত্রিসম্বন্ধে