পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

সঞ্চয় i. ©8S বর্তমানকালে আমাদের শিক্ষিত লোকেরা যখন প্রতিমাপূজার সমর্থন করেন তখন তাহারা বলেন প্রতিমা জিনিসটা আর কিছুই নহে, উহা ভাবকে রূপ দেওয়া । অর্থাৎ মানুষের মধ্যে যে বৃত্তি শিল্পসাহিত্যের সৃষ্টি করে ইহাও সেই বৃত্তির কাজ । কিন্তু একটু ভাবিয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে কথাটা সত্য নহে। দেবমূর্তিকে উপাসক কখনোই সাহিত্য হিসাবে দেখেন না। কারণ, সাহিত্যে আমরা কল্পনাকে মুক্তি দিবার জন্তই রূপের স্বষ্টি করি দেবমূর্তিতে আমরা কল্পনাকে বদ্ধ করিবার জন্তই চেষ্টা করিয়া থাকি। আমরা কল্পনাকে তখনই কল্পনা বলিয়া জানি যখন তাহার প্রবাহ থাকে, যখন তাহা এক হইতে আর-একের দিকে চলে, যখন তাহার সীমা কঠিন থাকে না ; তখনই কল্পনা আপনার সত্য কাজ করে। সে কাজটি কী, না, সত্যের অনন্ত রূপকে নির্দেশ করা । কল্পনা যখন থামিয়া গিয়া কেবলমাত্র একটি রূপের মধ্যে একান্তভাবে দেহধারণ করে তখন সে আপনার সেই রূপকেই দেখায়, রূপের অতীতকে অনন্ত সত্যকে আর দেখায় না । সেইজন্ত বিশ্বজগতের বিচিত্র ও নিত্যপ্রবাহিত রূপের চিরপরিবর্তনশীল অস্তহীন প্রকাশের মধ্যেই আমরা অনস্তেৱ আনন্দকে মূর্তিমান দেখিতে পাই । জগতের রূপ কারাপ্রাচীরের মতো অটল অচল হইয়া আমাদিগকে বিরিয়া থাকিলে কখনোই তাহার মধ্যে আমরা অনন্তের আনন্দকে জানিবার অবকাশমাত্র পাইতাম না। কিন্তু যখনই আমরা বিশেষ দেবমূর্তিকে পূজা করি তখনই সেই রূপের প্রতি আমরা চরমসত্যতা আরোপ করি । রূপের স্বাভাবিক পরিবর্তনশীল ধর্মকে লোপ করিয়া দিই রূপকে তেমন করিয়া দেখিবামাত্রই তাহাকে মিথ্যা করিয়া দেওয়া হয়, সেই মিথ্যার দ্বারা কখনোই সত্যের পূজা হইতে পারে না । তবে কেন কোনো কোনো বিদেশী ভাবুকের মুখে আমরা প্রতিমা-পূজার সম্বন্ধে ভাবের কথা শুনিতে পাই ? তাহার কারণ র্তাহারা ভাবুক, তাহারা পূজক নহেন। তাহারা যতক্ষণ ভাবুকের দৃষ্টিতে কোনো মূর্তিকে দেখিতেছেন ততক্ষণ র্তাহারা চরম করিয়া দেখিতেছেন না। একজন খ্ৰীস্টানও তাহার কাব্যে সরস্বতীর বন্দনা করিতে পারেন ; কারণ সরস্বতী তাহার কাছে ভাবের প্রকাশমাত্র - গ্রীসের এথেনীও তাহার কাছে যেমন, সরস্বতীও তেমনি। কিন্তু সরস্বতীর র্যাহারা পূজক তাহার এই বিশেষ মূর্তিকেই বিশেষভাবে অবলম্বন করিয়াছেন, জ্ঞানস্বরূপ অনন্তের এই একটিমাত্র রূপকেই তাহারা চরম করিয়া দেখিতেছেন–র্তাহাজের ধারণাকে তাহাজের ভক্তিকে এই বিশেষ রূপের বন্ধন হইতে র্তাহার। মুক্ত করিতেই পারেন না। এই বন্ধন মাছুষকে এতদূর পর্যন্ত বন্দী করে ধে, শুনা যায় শক্তি-উপাসক কোনো একজন বিখ্যাত ভক্ত মহাত্মা আলিপুর পশুশালায় সিংহকে বিশেষ ক্ষরিয়া দেখিবার জন্ত