পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\:)\9 o রবীন্দ্র-রচনাবলী মধ্যেও নিশ্চয় ইহার পরিচয় আছে । আমরাও নিশ্চয় আপনাকে উপলব্ধি করিবার জন্য অনন্ত জীবনের প্রাস্তে পৌছিবার দুরাশায় অপেক্ষা করিতেছি না। এ কথা বলিতেছি না যে, এখনও যখন আমার সমস্ত নিঃশেষে চুকিয়া বুকিয়া যায় নাই তখন আমি আপনাকে জানিতেছি না । বস্তুত আমার মধ্যে একদিকে চলা, এবং আর একদিকে পৌছানো, একদিকে বন্ধ, আর একদিকে এক, একসঙ্গেই রহিয়াছে, নহিলে অস্তিত্বের মতো বিভীষিকা আর কিছুই থাকিত না। একদিকে আমার বিচিত্র শক্তি বাহিরের বিচিত্রের দিকে চলিয়াছে, আর একদিকে আমার আনন্দ ভিতরের একের দিকে পূর্ণ হইয়া উঠিতেছে। * এই যেখানে মানুষের আপনার আনন্দ—এইখানেই মানুষের পর্যাপ্তি, এইখানেই মানুষ বড়ো । এইখান হইতেই গতি লইয়া মানুষের সমস্ত শক্তি বাহিরে চলিয়াছে এবং বাহির হইতে পুনরায় তাহার এইখানেই অর্ঘ্য আহরণ করিয়া ফিরিয়া আসিতেছে। বাহির হইতে যখন দেখি তখন বলি মানুষ নিঃশ্বাস লইয়া বাচিতেছে, মানুষ আহার করিয়া বাচিতেছে, রক্ত চলাচলে মানুষ বাচিয়া আছে। এমন করিয়া কত আর বলিব ? বলিতে গিয়া তালিকা শেষ হয় না। তখন দেখি শরীরের অণুতে অণুতে রসে রক্তে অস্থিমজ্জামায়ুপেশীতে ফর্দ কেবল বাড়িয়া চলিতেই থাকে। তাহার পরে যখন প্রাণের হিসাব শেষ পর্যন্ত মিলাইতে গিয়া আলোকে উত্তাপে বাতাসে জলে মাটিতে আসিয়া পৌছাই, যখন প্রাকৃত বৈজ্ঞানিক ও রাসায়নিক শক্তিরহস্তের মধ্যে গিয়া উপস্থিত হই, তখন একেবারে হাল ছাড়িয়া দেওয়া ছাড়া উপায় নাই । এমন করিয়া অন্তহীনতার খাতায় কেবলই পাতা উলটাইয়া প্রাস্ত হইয়া মরিতে হয় । কিন্তু বাহির হইতে প্রাণের ভিতর বাড়িতে গিয়া যখন প্রবেশ করি তখন কেবল একটি কথা বলি, প্রাণের আনন্দে মানুষ বাচিয়া আছে আর কিছু বলিবার দরকার হয় না। এই প্রাণের আনন্দেই আমরা নিশ্বাস লইতেছি, থাইতেছি, দেহু রচনা করিতেছি, বাড়িতেছি। বাচিয়া থাকিব এই প্রবল আনন্দময় ইচ্ছাতেই আমাদের সমস্ত শক্তি সচেষ্ট হইয়া বিশ্বময় ছটিয়া চলিতেছে। প্রাণের আনন্দেই জীবপ্রবাহ প্রবাহিত হইয়৷ চলিয়াছে ; প্রাণের নিগূঢ় আনন্দে প্রাণীর জগতের নানা স্পর্শের তানে আপনার স্বায়ুর তারগুলিকে কেবলই বিচিত্রতর করিয়া বাধিয়া তুলিতেছে। বাচিয়া থাকিতে চাই এই ইচ্ছা সস্তানসস্ততিকে জন্ম দিতেছে, রক্ষা করিতেছে, চারিদিকের পরিবেষ্টনের সঙ্গে উত্তরোত্তর আপনার সর্বাঙ্গীণ সামঞ্জস্ত সাধন করিতেছে। : এমন কি, বাচিয়া থাকিব এই আনন্দেই জীব মৃত্যুকেও স্বীকার করিতেছে। সে লড়াই করিয়া প্রাণের আনন্দেই প্রাণ দিতেছে। কর্মী মউমাছিরা আপনাকে অঙ্গহীন