পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সঞ্চয় రిటావె চিন্তা করিতে হইবে ; ইহাদের সমস্ত সুখদুঃখ সুবিধা-অসুবিধাকে আপনার করিয়া । লইতে হইবে-ইহাকেই কি বলে মানুষের সঙ্গ এড়াইয়া দায়িত্ব কাটাইয়া শৌখিন শাস্তির মধ্যে একটা বেড়া-দেওয়া পারমার্থিকতার দুর্বল সাধনা ? আমার সেই বন্ধু হয়তে বলিবেন, নির্জনতার কথা ছাড়িয়া দাও-কিন্তু সংসারে যেখানে চারিদিকেই ভালো-মন্দর তরঙ্গ কেবলই উঠা-পড়া করিতেছে সেইখানেই ঠিক সত্যভাবে ভালোকে চিনাইয়া দিবার সুযোগ পাওয়া যায়। কাটার পরিচয় যেখানে নাই সেখানে কাটা বঁাচাইয়া চলিবার শিক্ষা হুইবে কেমন করিয়া ? কটাবনের গোলাপটাই সত্যকার গোলাপ—আর বারবার অতি ঘত্বে চোলাই করিয়া লওয়া সাধুতার গোলাপি আতর একটা নবাবি জিনিস । হায়, সাধুতার এই নিষ্কণ্টক আতরটি কোন দোকানে মেলে তাহ নিশ্চয় জানি না কিন্তু আমাদের আশ্রমে যে তাহার কারবার নাই তাহা নিজের দিকে তাকাইলেই বুঝিতে পারি। কাব্যে পুরাণে সর্বত্রই তপোবনের আদর্শটি অত্যুজ্জল বর্ণনায় বিরাজ করে কিন্তু তবু সেই বর্ণনার গকে ফাকে বহুতর মুনীনাঞ্চ মতিভ্ৰমঃ ঘন ঘন উকি মারিতেছে। মানুষের আদর্শও যেমন সত্য, সেই আদর্শের ব্যাঘাতও তেমনি সত্য—যাহারা সেই ব্যাঘাতের ভিতর দিয়াই চোখ মেলিয়া আদর্শকে দেখিতে না পারে, চোখ বুজিয়া স্বপ্ন দেখা ছাড়া তাহদের আর গতি নাই । আমরা যে আশ্রমের কথা বলিতেছি, সেখানে লোকালয়ের অন্ত বিভাগেরই মতো মন্দের জন্ত সিংহদ্বার খোলাই আছে। শয়তানকে সেখানে সকল সময়ে সাপের মতে ছদ্মবেশে প্রবেশ করিতে হয় না—সে দিব্য ভদ্রলোকেরই মতো মাথা তুলিয়া ষাতায়াত করে। সেখানে সংসারের নানা দাবি, বৈষয়িকতার নানা আড়ম্বর, প্রবৃত্তির নানা চাঞ্চল্য এবং অহং-পুরুষের নানা উদ্ধত মূর্তি সর্বদাই দেখিতে পাওয়া যায়। সাধারণ লোকালয়ে বরঞ্চ তাহারা তেমন করিয়া চোখেই পড়ে না— কারণ ভালোমন্দ সেখানে একপ্রকার আপস করিয়া মিলিয়া-মিশিয়াই থাকে—এখানে তাহাদের মাঝখানে একটা বিচ্ছেদ আছে বলিয়াই মন্দটা এখানে খুব করিয়া দেখা দেয়। তাই যদি হইল তবে আর হইল কী ? বন্ধুরা বলিবেন, যদি সেখানে জনতার চাপ লোকালয়ের চেয়ে কম না হইয়। বরঞ্চ বেশিই হয় এবং মন্দকেই যদি সেখান হইতে নিঃশেষে ছাকিয়৷ কেলিবার আশা না করিতে পার এবং যদি সেখানকার আশ্রমবাসীরা সংসারের সাধারণ লোকেরই মতো মাঝারি রকমেরই মাছুষ হন তবে সেই প্রকার স্থানই যে বালক-বালিকাদের ধর্মশিক্ষার অমুকুল স্থান তাহ কেমন করিয়া বলিৰে ? এ সম্বন্ধে আমার স্বাহ বক্তব্য তাহ এই,—কবিকল্পনার স্বারা আগাগোড়া মনোরম