পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○為あ রবীন্দ্র-রচনাবলী । করিয়া যে একটা আকাশকুসুমখচিত আশ্রম গড়া যায় না এ কথাটা আমাকে খুব স্পষ্ট করিয়াই বলিতে হইতেছে—কারণ আমার মতো লোকের মুখে কোনো প্রস্তাব শুনিলেই সেটাকে নিরতিশয় ভাবুকত বলিয়া শ্রোতার সন্দেহ করিতে পারেন । আশ্রম বলিতে আমি যে কোনো একটা অদ্ভূত অসম্ভব স্বপ্নস্থলভ পদার্থের কল্পনা করিতেছি তাহা নহে। সকল স্থূলদেহধারীর সঙ্গেই র্তাহার স্কুল দেহের ঐক্য আছে একথা আমি বারংবার স্বীকার করিব । কেবল যেখানে তাহার স্বল্প জায়গাটি সেইখানেই তাহার স্বাতন্ত্র্য। সে স্বাতন্ত্র্য সেইখানেই, যেখানে তাহার মাঝখানে একটি আদর্শ বিরাজ করিতেছে । সে আদশটি সাধারণ সংসারের আদর্শ নহে, সে আদর্শ আশ্রমের আদর্শ—তাহা বাসনার দিকে নয় সাধনার দিকেই নিয়ত লক্ষ্য নির্দেশ করিতেছে। এই আশ্রম যদি বা পাকের মধ্যেও ফুটিয়া থাকে তবু ভূমার দিকে তাহার মুখ তুলিয়াছে, সে আপনাকে যদি বা ছাড়িতে না পারিয়া থাকে তবু আপনাকে কেবলই ছাড়াইতে চাহিতেছে ; সে যেখানে দাড়াইয়া আছে সেইখানেই তাহার পরিচয় নয়, সে যেখানে দৃষ্টি রাখিয়াছে সেইখানেই তাহার প্রকাশ। তাহার সকলের উর্ধের্ব ষে সাধনার শিখাটি জলিতেছে তাহাই তাহার সর্বোচ্চ সত্য । কিন্তু কেনই বা বড়ো কথাটাকে গোপন করিব ? কেনই বা কেবল কেজো লোকদের মন জোগাইবার জন্য ভিতরকার আসল রসটিকে আড়াল করিয়া রাখিব ? এই প্রবন্ধ শেষ করিবার পূর্বে আমি অসংকোচে বলিব, আশ্রম বলিতেই আমাদের মনের সামনে যে ছবিটি জাগে যে ভাবটি ভরিয়া উঠে তাহা আমাদের সমস্ত হৃদয়কে হরণ করে। তাহার কারণ, শুদ্ধমাত্র এ নহে যে, তাহা আমাদের জাতির অনেক যুগের ধ্যানের ধন, সাধনার স্বাষ্ট্র—তাহার গভীর কারণ এই, আমাদের সমস্তের সঙ্গে তাহার ভারি একটি সংগতি দেখিতে পাই, এইজন্যই তাহাকে এমন সত্য এমন সুন্দর বলিয়া ঠেকে। বিধাতার কাছে আমরা যে দান পাইয়াছি তাহাকে অস্বীকার করিব কেমন করিয়া ? আমরা তো ঘন মেঘের কালিমালিপ্ত আকাশের নিচে জন্মগ্রহণ করি নাই, শীতের নিষ্ঠুর পীড়ন আমাদিগকে তে রুদ্ধ ঘরের মধ্যে তাড়না করিয়া বদ্ধ করে নাই ; আকাশ যে আমাদের কাছে তাহার বিরাট বক্ষপট উন্মুক্ত করিয়া দিয়াছে ; আলোক যে কোনোখানে কিছুমাত্র কার্পণ্য রাখিল না ; স্বৰ্বোদয় যে ভক্তির পূজাগুলির মতো আকাশে উঠে এবং স্বর্ধাস্ত যে ভক্তের প্রণামের মতো দিগন্তে নীরবে অবনমিত হয় ; কী উদার নদীর ধারা, কী নির্জন গভীর তাহার প্রসারিত তট * অবারিত মাঠ কত্রের যোগাসনের মতে স্থির হইয় পড়িয়া আছে। কিন্তু তবু সে যেন বিষ্ণুর বাহন মহাবিহঙ্গমের মতো তাহার দিগন্তজোড়া পাখা মেলিয়া দিয়া কোন অনন্তের অভিমুখে উড়িয়া চলিয়াছে সেখানে তাহার গতিকে আর