পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৬

রবীন্দ্র-রচনাবলী چ ه 8 আপনাকে পাইতে হইবে না ? তিনি বলিলেন, “বাব, এ তে সহজ কথা, তুমি বাল বলিতেছ তাহ বেশ বুঝি কিন্তু তবু ধর্মে যাহা বলে তাহ পালন না করিতে যে ভরস পাই না ।" একথার অর্থ এই যে, সেই রমণীর স্বাভাবিক বুদ্ধি তাহার ধর্মবিশ্বাসের উপরে উঠিয়া আছে। আর একটা দৃষ্টান্ত দেখো। একাদশীর দিনে বিধবাকে নির্জল উপবাস করিতে হইবে ইহা আমাদের দেশে লোকাচারসম্মত অথবা শাস্ত্রায়ুগত ধর্মাহুশাসন । ইহার মধ্যে যে নিদারুণ নিষ্ঠুরতা আছে স্বভাবত আমাদের প্রকৃতিতে তাহা বর্তমান নাই। একথা কখনোই সত্য নহে স্ত্রীলোককে ক্ষুধাপিপাসায় পীড়িত করিতে আমরা সহজে দুঃখ পাই না। তবে কেন হতভাগিনীদিগকে আমরা ইচ্ছা করিয়া দুঃখ দিই এ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিলে আর কোনো যুক্তিসংগত উত্তর খুজিয়া পাই না, কেবল এই কথাই বলিতে হয় আমাদের ধর্মে বলে বিধবাদিগকে একাদশীর দিনে ক্ষুধার অন্ন ও পিপাসার জল দিতে পরিবে না, এমন কি, মরিবার মুখে রোগের ঔষধ পর্যন্ত সেবন করানো নিষেধ। এখানে স্পষ্টই দেখা যাইতেছে আমাদের ধর্ম আমাদের সহজবুদ্ধির চেয়ে অনেক নিচে নামিয়া গেছে। 'የ ইহা আমি অনেকবার দেখিয়াছি, ছেলের স্বভাবতই তাহদের সহপাঠী বন্ধুদিগকে জাতিবর্ণ লইয়া ঘৃণা করে না-কখনোই তাহারা আপনাকে হীনবর্ণ বন্ধু অপেক্ষা কোনো অংশে শ্রেষ্ঠ মনে করিতে পারে না, কারণ অনেক স্থলেই শ্রেষ্ঠতা জাতিবর্ণের অপেক্ষা রাখে না তাহা তাহারা প্রত্যহই প্রত্যক্ষ দেখিতে পাইতেছে, তথাপি আহার কালে তাহার হীনবর্ণ বন্ধুর লেশমাত্র সংস্পৰ্শ পরিহার্ধ মনে করে। এমন ঘটনা ঘটতে দেখা গিয়াছে যে রান্নাঘরের বাহিরের দাওয়ার উপরে একটা ঘুড়ি পড়িয়াছিল-সেই ঘুড়িটা তুলিয়া লইবার জন্য একজন পতিত জাতির ছেলে ক্ষণকালের জন্য দাওয়ায় পদক্ষেপ করিয়াছিল বলিয়া রান্নাঘরের সমস্ত ভাত ফেলা গিয়াছিল, অথচ সেই দাওয়ায় সর্বদাই কুকুর যাতায়াত করে তাহাতে অন্ন অপবিত্র, হয় না। এই আচরণের মধ্যে যে পরিমাণ অতিঅসহ মানবন্ধুণা আছে, তত পরিমাণ ঘৃণা কি যথার্থই আমাদের অস্তরতর প্রকৃতির মধ্যে বর্তমান ? এতটা মানবস্তৃণা আমাদের জাতির মনে স্বভাবতই আছে একথা আমি তো স্বীকার করিতে পারি না। বস্তুত এখানে স্পষ্টই আমাদের ধর্ম আমাদের হৃদয়ের চেয়ে অনেক নিচে পড়িয়া গিয়াছে। এইরূপে মানুষ ধর্মকে যখন আপনার চেয়েও নিচে নামাইয়া দেয় তখন সে নিজের সহজ মচুন্যত্বও যে কতদূর পর্যন্ত বিশ্বত হয় তাহার একটি নিষ্ঠুর দৃষ্টান্ত আমার মনে বেন আগুন দিয়া চিরকালের মতো দাগিয়া রহিয়া গিয়াছে । আমি জানি একজন বিদেশী