পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8১২ রবীন্দ্র-রচনাবলী আমার বৈজ্ঞানিক বন্ধুর আর সইল না। তিনি বললেন, তুমি কোন সাবেককালের ওয়েটং রুমের আরাম-কেনারায় পড়ে নিজা দিচ্ছ ওদিকে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের রেলগাড়িটা যে বাঁশি বাজিয়ে ছুট দিয়েছে। তারাগুলো নড়ে না এটা তোমার কেমন কথা ? একেবারে নিছক কবিত্ব ! আমার বলবার ইচ্ছা ছিল, তারাগুলো যে নড়ে এটা তোমার নিছক বৈজ্ঞানিকত্ব । কিন্তু সময় এমনি খারাপ ওটা জয়ধ্বনির মতোই শোনাবে। আমার কবিত্বকলঙ্কটুকু স্বীকার করেই নেওয়া গেল। এই কবিত্বের কালিমা পৃথিবীর রাক্রিটুকুরই মতো। এর শিয়রের কাছে বিজ্ঞানের জগজয়ী আলো দাড়িয়ে আছে কিন্তু সে এর গায়ে হাত তোলে না । স্নেহ ক'রে বলে, আহা স্বপ্ন দেখুক । আমার কথাটা হচ্ছে এই যে, স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছি তারাগুলো চুপচাপ দাড়িয়ে আছে । এর উপরে তো তর্ক চলে না । বিজ্ঞান বলে, তুমি অত্যন্ত বেশি দূরে আছ বলেই দেখছ তারাগুলো স্থির। কিন্তু সেটা সত্য নয়। আমি বলি, তুমি অত্যন্ত বেশি কাছে উকি মারছ বলেই বলছ ওরা চলছে। কিন্তু সেটা সত্য নয়। বিজ্ঞান চোখ পাকিয়ে বলে, সে কেমন কথা ? আমিও চোখ পাকিয়ে জবাব দিই, কাছের পক্ষ নিয়ে তুমি যদি দূরকে গাল দিতে পার তবে দূরের পক্ষ নিয়ে আমিই বা কাছকে গাল দেব না কেন ? বিজ্ঞান বলে, যখন দুই পক্ষ একেবারে উলটো কথা বলে তখন ওদের মধ্যে এক পক্ষকেই মানতে হয়। আমি বলি, তুমি তা তো মান না। পৃথিবীকে গোলাকার বলবার বেলায় তুমি অনায়াসে দূরের দোহাই পাড়। তখন বল, কাছে আছি বলেই পৃথিবীটাকে সমতল বলে ভ্রম হয় । তখন তোমার তর্ক এই যে কাছে থেকে কেবল অংশকে দেখা যায়, দূরে না দাড়ালে সমগ্রকে দেখা যায় না । তোমার এ কথাটায় সায় দিতে রাজি আছি । এই জন্যই তো আপনার সম্বন্ধে মানুষের মিথ্যা অহংকার । কেননা আপনি অত্যস্ত কাছে। শাস্ত্রে তাই বলে, আপনাকে ষে লোক অন্যের মধ্যে দেখে সেই সত্য দেখে— অর্থাৎ আপনার থেকে দূরে না গেলে আপনার গোলাকার বিশ্বরূপ দেখা যায় না। দূরকে যদি এতটা খাতিরই কর তবে কোন মুখে বলবে, তারাগুলো ছুটোছুটি করে মরছে ? মধ্যাহ্নস্বর্ধকে চোখে দেখতে গেলে কালে কাচের মধ্য দিয়ে দেখতে হয়। বিশ্বলোকের জ্যোতির্ময় দুর্দশরূপকে আমরা সমগ্রভাবে দেখব বলেই পৃথিবী এই কালো