পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী "ל צ8 আর এক কোটিতে অনন্ত। আমার অব্যক্ত-আমি আমার ব্যক্ত-আমির যোগে সত্য। আমার ব্যক্ত-আমি আমার অব্যক্ত-আমির যোগে সত্য । তার পরে কথা এই যে, তবে এই আমিট কোথা থেকে আসে। সেটাও আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব নয়। অসীম যেখানে আপনাকে সীমায় সংহত করেছেন সেখানেই অহংকার। সোহহমশ্মি। সেখানেই তিনি হচ্ছেন আমি আছি। অসীমের বাণী, অর্থাৎ সীমার মধ্যে অসীমের প্রকাশই হচ্ছে, অহমৰ্ম্মি । আমি আছি। যেখানেই হওয়ার পালা আরম্ভ হল সেখানেই আমির পালা । সমস্ত সীমার মধ্যেই অসীম বলছেন, আহমৰ্ম্মি । আমি আছি, এইটেই হচ্ছে স্বষ্টির ভাষা । এই এক আমি-আছিই লক্ষ লক্ষ আমি-আছিতে ছড়িয়ে পড়েছেন—তবু তার সীমা নেই। যদিচ আমার আমি-আছি সেই মহা আমি-আছির প্রকাশ কিন্তু তাই বলে একথা বলাও চলে না ষে এই প্রকাশেই তার প্রকাশ সমাপ্ত। তিনি আমার আমি আছির মধ্যেও যেমন আছেন তেমনি আমার আমি-আছিকে অতিক্রম করেও আছেন। সেই জন্যেই অগণ্য আমি-আছির মধ্যে যোগের পথ রয়েছে। সেই জন্যেই উপনিষৎ বলেছেন,—সর্বভূতের মধ্যে যে লোক আত্মাকে এবং আত্মার মধ্যে যে লোক সর্বভূতকে জানে সে আর গোপন থাকতে পারে না । আপনাকে সেই জানে না যে লোক আপনাকে কেবল আপনি বলেই জানে, অন্তকেও যে আপন বলে জানে না । তত্ত্বজ্ঞানে আমার কোনো অধিকার নেই—আমি সেদিক থেকে কিছু বলছিও নে। আমি সেই মূঢ় যে মানুষ বিচিত্রকে বিশ্বাস করে, বিশ্বকে সন্দেহ করে না। আমি নিজের প্রকৃতির ভিতর থেকেই জানি দূরও সত্য নিকটও সত্য, স্থিতিও সত্য গতিও সত্য। অণু,পরমাণু যুক্তির দ্বারা বিশ্লিষ্ট এবং ইন্দ্রিয় মনের আশ্রয় থেকে একেবারে ভ্রষ্ট হতে হতে ক্রমে আকার আয়তনের অতীত হয়ে প্রলয় সাগরের তীরে এসে দাড়ায় সেটা আমার কাছে বিস্ময়কর বা মনোহর বোধ হয় না। রূপই আমার কাছে আশ্চর্ষ, রসই আমার কাছে মনোহর। সকলের চেয়ে আশ্চর্য এই যে আকারের কোয়ার নিরাকারের হৃদয় থেকে নিত্যকাল উৎসারিত হয়ে কিছুতেই ফুরোতে চাচ্ছে না। আমি এই দেখেছি যেদিন আমার হৃদয় প্রেমে পূর্ণ হয়ে ওঠে সেদিন স্বর্যালোকের উজ্জলত বেড়ে ওঠে, সেদিন চন্দ্রালোকের মাধুর্ব ঘনীভূত হয় - সেদিন সমস্ত জগতের মুর এবং তাল নতুন তানে নতুন লয়ে বাজতে থাকে—তার থেকেই বুঝতে পারি, জগৎ আমার মন দিয়ে আমার হৃদয় দিয়ে ওতপ্রোত। যে দুইয়ের যোগে স্বষ্টি হয় তার মধ্যে এক হচ্ছে আমার হৃদয় মন । আমি যখন বর্ধার গান গেয়েছি তখন সেই মেঘমল্পারে জগতের সমস্ত বর্ধার অপ্রপাতধ্বনি নবতর ভাব এবং অপূর্ব বেদনায় পূর্ণ হয়ে উঠেছে।