পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় 8:ፃ যদি না লন তবে কৌলিকস্বত্র ছিন্ন হইয়া যায় এবং পিতৃপিতামহদের সহিত যোগধারা নষ্ট হুইয়া সমাজ শৃঙ্খলাভ্ৰষ্ট হইয়া পড়ে। এই কারণে যখন সমাজের একশ্রেণী যুদ্ধ প্রভৃতি উপলক্ষ্যে নব নব অধ্যবসায়ে নিযুক্ত তখন আর-এক শ্রেণী বংশের প্রাচীন ধর্ম এবং সমস্ত স্মরণীয় ব্যাপারকে বিশুদ্ধ ও অবিচ্ছিন্ন করিয়া রাখিবার জন্যই বিশেষভাবে প্রবৃত্ত হইলেন । ● কিন্তু যখনই বিশেষ শ্রেণীর উপর এইরূপ কাজের ভার পড়ে তখনই সমস্ত জাতির চিত্তবিকাশের সঙ্গে তাহার ধর্মবিকাশের সমতানতায় একটা বাধা পড়িয়া যায়। কারণ সেই বিশেষ শ্রেণী ধৰ্মবিধিগুলিকে বাধের মতে এক জায়গায় দৃঢ় করিয়া বাৰিয়া রাখেন সুতরাং সমস্ত জাতির মনের অগ্রসরগতির সঙ্গে তাহার সামঞ্জস্ত থাকে না । ক্রমে ক্রমে অলক্ষ্যভাবে এই সামঞ্জস্য এতদূর পর্যন্ত নষ্ট হইয়া যায় যে, অবশেষে একটা বিপ্লব ব্যতীত সমন্বয়সাধনের উপায় পাওয়া যায় না। এইরূপে একদা ব্ৰাহ্মণের যখন আর্যদের চিরাগত প্রথা ও পূজাপদ্ধতিকে আগলাইয়া বসিয়াছিলেন, যখন সেই সমস্ত ক্রিয়াকাওকে ক্রমশই তাহারা কেবল জটিল ও বিস্তারিত করিয়া তুলিতেছিলেন তখন ক্ষত্রিয়েরা সর্বপ্রকার প্রাকৃতিক ও মাকুষিক বাধার সঙ্গে সংগ্রাম করিতে করিতে জয়োল্লাসে অগ্রসর হইয়া চলিতেছিলেন । এইজন্যই তখন আধদের মধ্যে প্রধান মিলনের ক্ষেত্র ছিল ক্ষত্ৰিয়সমাজ । শক্রর সহিত যুদ্ধে যাহার এক হইয়া প্রাণ দেয় তাহাদের মতো এমন মিলন আর কাহারও হইতে পারে না । মৃত্যুর সম্মুখে যাহার একত্র হয় তাহার পরস্পরের অনৈক্যকে বড়ো করিয়া দেখিতে পারে না । অপর পক্ষে স্বাক্ষাতিস্বল্পভাবে মন্ত্র দেবতা ও যজ্ঞকার্ধের স্বাতন্ত্র্য রক্ষার ব্যবসায় ক্ষত্রিয়ের নহে, তাহারা মানবের বন্ধুরদুর্গম জীবনক্ষেত্রে নব নব ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্যে মানুষ, এই কারণে প্রথামূলক বাহাদুষ্ঠানগত ভেদের বোধটা ক্ষত্রিয়ের মনে তেমন সুদৃঢ় হইয় উঠিতে পারে না । অতএব আত্মরক্ষা ও উপনিবেশ বিস্তারের উপলক্ষ্যে সমস্ত আৰ্যদলের মধ্যকার ঐক্যস্বত্রটি ছিল ক্ষত্রিয়দের হাতে। এইরূপে একদিন ক্ষত্রিয়েরাই সমস্ত অনৈক্যের অভ্যন্তরে একই যে সত্যপদাৰ্থ ইহা অনুভব করিয়াছিলেন। এইজন্ত ব্রহ্মবিদ্যা বিশেষভাবে ক্ষত্রিয়ের বিস্ত হইয়া উঠিয়া ঋক্ যজুঃ সাম প্রভৃতিকে অপরাবিষ্ঠা বলিয়া ঘোষণা করিয়াছে এবং ব্রাহ্মণ কতৃক সযত্নে রক্ষিত হোম যাগ যজ্ঞ প্রভৃতি কর্মকাগুকে নিষ্ফল বলিয়া পরিত্যাগ করিতে চাহিয়াছে । ইহা হইতে স্পষ্টই দেখা যায় একদিন পুরাতনের সহিত নূতনের বিরোধ বাধিয়াছিল। r সমাজে যখন একটা বড়ো ভাব সংক্রামকরূপে দেখা দেয় তখন তাহ একান্তভাবে কোনো গণ্ডিকে মানে না। আর্যজাতির নিজেদের মধ্যে একটা ঐক্যবোধ যতই