পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় ህ©ፃ হওয়া অপেক্ষ পিছলির অন্তের পথে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তাহার সম্পূর্ণ ছিল। এই জন্যই ভারতবর্ষে স্বভাবের নিয়মে আত্মরক্ষণীশক্তি আত্মপ্রসারণী শক্তির অপেক্ষ বড়ো হইয়া উঠিয়াছে। J রামচন্দ্রের জীবন আলোচনায় আমরা ইহাই দেখিলাম যে ক্ষত্রিয়ের একদিন ধর্মকে এমন একটা ঐক্যের দিকে পাইয়াছিলেন যাহাতে অনার্বদের সহিত বিরুদ্ধতাকে তাহার মিলননীতির দ্বারাই সহজে অতিক্রম করিতে পারিয়াছিলেন । দুই পক্ষের চিরস্তন প্রাণান্তিক সংগ্রাম কখনো কোনো সমাজের পক্ষে হিতকর হইতে পারে না— হয় এক পক্ষকে মারিতে, নয় দুই পক্ষকে মিলিতে হইবে । ভারতবর্ষে একদা ধর্মকে আশ্রয় করিয়া সেই মিলনের কাজ আরম্ভ হইয়াছিল । প্রথমে এই ধর্ম ও এই মিলননীতি বাধা পাইয়াছিল কিন্তু অবশেষে ব্রাহ্মণরা ইহাকে স্বীকার করিয়া আত্মসাৎ করিয়া লইলেন। আর্ষে অনার্ষে যখন অল্প অল্প করিয়া যোগ স্থাপন হইতেছে তখন অনার্যদের ধর্মের সঙ্গেও বোঝাপড়া করার প্রয়োজন ঘটিয়াছিল। এই সময়ে অনার্বদের দেবতা শিবের সঙ্গে আধউপাসকদের একটা বিরোধ চলিতেছিল, এবং সেই বিরোধে কখনো আর্ষের কখনো অনার্ষের জয়ী হুইতেছিল । কৃষ্ণের অল্পবর্তী অজুন কিরাতদের দেবতা শিবের কাছে একদিন হার মানিয়াছিলেন। শিবভক্ত বাণ-অসুরের কন্যা উষাকে কৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধ হরণ করিয়াছিলেন—এই সংগ্রামে কৃষ্ণ জয়ী হইয়াছিলেন। বৈদিক যজ্ঞে অনার্ধ শিবকে দেবতা বলিয়া স্বীকার করা হয় নাই, সেই উপলক্ষ্যে শিবের অনার্ষ অনুচরগণ যজ্ঞ নষ্ট করিয়াছিল। অবশেষে শিবকে বৈদিক রুদ্রের সহিত মিলাইয়া একদিন তাহাকে আপন করিয়া লইয়া” আর্ষ অনার্ষের এই ধর্মবিরোধ মিটাইতে হইয়াছিল। তথাপি দেবতা যখন অনেক হইয়া পড়েন তখন র্তাহাদের মধ্যে কে বড়ে কে ছোটো সে বিবাদ সহজে মিটিতে চায় না। তাই মহাভারতে রুত্রের সহিত বিষ্ণুর সংগ্রামের উল্লেখ আছে—সেই সংগ্রামে রুদ্র বিষ্ণুকেই শ্রেষ্ঠ বলিয়া স্বীকার করিয়াছিলেন। মহাভারত আলোচনা করিলে স্পষ্টই দেখা যায় বিরোধের মধ্য দিয়াও আর্যদের সহিত অনার্বদের রক্তের মিলন ও ধর্মের মিলন ঘটিতেছিল। এইরূপে যতই বর্ণসংকর ও ধর্মসংকর উৎপন্ন হইতে লাগিল ততই সমাজের আত্মরক্ষণীশক্তি বারংবার সীমানির্ণয় করিয়া আপনাকে বাচাইতে চেষ্টা করিয়াছে। যাহাকে ত্যাগ করিতে পারে নাই তাহাকে গ্রহণ করিয়া বঁtধ বাধিয়া দিয়াছে । মন্থতে বর্ণসংকরের বিরুদ্ধে ষে চেষ্টা আছে এবং তাহাতে মূর্তি-পূজা-ব্যবসায়ী দেবল ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে যে স্থণা প্রকাশিত হইয়াছে তাহ হইতে বুঝা যায় রক্তে ও ধর্মে অনাৰদের মিশ্রণকে গ্রহণ করিয়াও তাহাকে বাধা দিবার