পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় • 88ማ হয় না—তাহার সমস্তটাকেই রক্ষা করিতে গেলে তাহার মধ্যে শত সহস্ৰ অসংগতি থাকিয়া যায় । এইসমস্ত অসংগতির কোনোপ্রকার সমগ্ৰন্থ হয় না— কেবল কালক্রমে তাহা অভ্যস্ত হইয়া যায় মাত্র। এই অভ্যাসের মধ্যে অসংগতিগুলি একত্র থাকে, তাহাদের মিলিত করিবার প্রয়োজনবোধও চলিয়া যায়। তখন ধীরে ধীরে এই নীতিই সমাজে প্রবল হইয়া উঠে যে, যাহার যেরূপ শক্তি ও প্রবৃত্তি সে সেইরূপ পূজা আচার লইয়াই থাক্ । ইহা একপ্রকার হাল ছাড়িয়া দেওয়া নীতি। যখন বিরুদ্ধগুলিকে পাশে রাখিতেই হইবে অথচ কোনো মতেই মিলাইতে পারা যাইবে না, তখন এই কথা ছাড়া অন্য কথা হইতেই পারে না । এইরূপে বৌদ্ধযুগের প্রলয়াবসানে বিপর্যন্ত সমাজের নূতন পুরাতন সমস্ত বিচ্ছিন্ন পদার্থ লইয়া ব্রাহ্মণ যেমন করিয়া পারে সেগুলিকে সাজাইয়া শৃঙ্খলাবদ্ধ করিতে বসিল। এমন অবস্থায় স্বভাবতই শৃঙ্খল অত্যন্ত কঠিন হইয়া উঠে। যাহারা স্বতই স্বতন্ত্র, যাহার নানা জাতির নানা কালের সামগ্ৰী, তাহাদিগকে এক করিয়া বাধিতে গেলে বাধন অত্যস্ত আঁট করিয়া রাখিতে হয়—তাহারা জীবনধর্মের নিয়ম অনুসারে আপনার যোগ আপনিই সাধন করে না । ভারতবর্ষে ইতিহাসের আরম্ভযুগে যখন আর্ব অনার্ষে যুদ্ধ চলিতেছিল তখন দুই পক্ষের মধ্যে একটা প্রবল বিরোধ ছিল। এই প্রকার বিরোধের মধ্যেও এক প্রকারের সমকক্ষতা থাকে। মানুষ যাহার সঙ্গে লড়াই করে তাহাকে তীব্রভাবে দ্বেষ করিতে পারে কিন্তু তাহাকে মনের সঙ্গে অবজ্ঞা করিতে পারে না । এই জন্য ক্ষত্রিয়েরা অনার্ষের সহিত যেমন লড়াই করিয়াছে তেমনি তাহাদের সহিত মিলিতও হইয়াছে। মহাভারতে ক্ষত্রিয়দের বিবাহের ফর্দ ধরিলেই তাহা বুঝা যাইবে । কিন্তু ইতিহাসের পরবর্তী যুগে যখন আর-একদিন অনার্য বিরোধ তীব্র হইয় উঠিয়াছিল অনার্ধের তখন আর বাহিরে নাই তাহার একেবারে ঘরে ঢুকিয়া পড়িয়াছে। সুতরাং তখন যুদ্ধ করিবার দিন আর নাই। এই জন্ত সেই অবস্থায় বিদ্বেষ একান্ত একটা ঘূণার আকার ধরিয়াছিল। এই ঘূণাই তখন অন্ত্র। ঘৃণার দ্বারা মানুষকে কেবল ষে দূরে ঠেকাইয়া রাখা যায় তাহা নহে, যাহাকে সকল প্রকারে ঘৃণা করা যায় তাহারও মন আপনি খাটো হইয়া আসে ; সেও আপনার হীনতার সংকোচে সমাজের মধ্যে কুষ্ঠিত হইয়া থাকে ; যেখানে সে থাকে সেখানে সে কোনোরূপ অধিকার দাবি করে না। এইরূপ যখন সমাজের একভাগ আপনাকে নিকৃষ্ট বলিয়াই স্বীকার করিয়া লয় এবং আর-একভাগ আপনার আধিপত্যে কোনো বাধাই পায় ন—তখন নিচে সে যতই অবনত হয় উপরে ষে থাকে সেও ততই নামিয়া পড়িতে থাকে। ভারতবর্ষে