পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৭

পরিচয় 關 8&O অবগু, আমার সাত পুরুষে বাহ ঘটে নাই অষ্টমপুরুষে আমি যদি তাছাই করিয়া বলি, যদি হাবড়ায় পুল পার হইয়া বাই তবে আমার বংশের সমস্ত মালীপিলী ও খুড়োজ্যেঠার দল নিশ্চয়ই বিক্ষরিত চক্ষুতারকা ললাটের দিকে তুলিয়া বলিবে, “তুই অমুক গোষ্ঠীতে জন্সিয়াও পুল পারাপারি করিতে গুরু করিয়াছিল! ইহাও আমাদিগকে চক্ষে দেখিতে হইল।” চাই কি লজ্জায় ক্ষোভে র্তাহাজের এমন ইচ্ছাও হইতে পারে আমি পুলের অপর পারেই বরাবর থাকিয়া যাই কিন্তু তবু আমি ষে সেই গোষ্ঠীরই ছেলে সে পরিচয়ট পাকা । মা মাসীরা রাগ করিয়া তাহ স্বীকার না করিলেও পাকা, আমি নিজে অভিমান করিয়া তাহ অস্বীকার করিলেও পাকা । বস্তুত পূর্ব-পুরুষগত যোগটা নিত্য, কিন্তু চলাফেরাসম্বন্ধে অভ্যাসটা নিত্য নহে। আমাদের দেশে বর্তমানকালে, কী বলিয়া আপনার পরিচয় দিব তাহ লইয়া অন্তত ব্রাহ্মসমাজে একটা তর্ক উঠিয়াছে। অথচ এ তর্কট রামমোহন রায়ের মনের মধ্যে একেবারেই ছিল না দেখিতে পাই। এদিকে তিনি সমাজপ্রচলিত বিশ্বাস ও পূজাৰ্চনা ছাড়িয়াছেন, কোরান পড়িতেছেন, বাইবেল হইতে সত্যধর্মের সারসংগ্ৰহ করিতেছেন, অ্যাডাম সাহেবকে দলে টানিয়া ব্ৰহ্মসভা স্থাপন করিয়াছেন ; সমাজে নিন্দায় কান পাতিবার জো নাই, তাহাকে সকলেই বিধর্মী বলিয়া গালি দিতেছে, এমন কি যদি কোনো নিরাপদ সুযোগ মিলিত তবে তাহাকে মারিয়া কেলিতে পারে এমন লোকের অভাব ছিল না,—কিন্তু কী বলিয়া আপনার পরিচয় দিব সে বিষয়ে তাহার মনে কোনো দিন লেশমাত্র সংশয় ওঠে নাই। কারণ হাজার হাজার লোকে তাহাকে অহিন্দু বলিলেও তিনি হিন্দু এ সত্য যখন লোপ পাইবার নয় তখন এ সম্বন্ধে চিস্তা করিয়া সময় নষ্ট করিবার কোনো দরকার ছিল না । বর্তমানকালে আমরা কেহ কেহ এই লইয়া চিন্তা করিতে আরম্ভ করিয়াছি। আমরা যে কী, সে লইয়া আমাদের মনে একটা সন্দেহ জন্মিয়াছে। আমরা বলিতেছি আমরা আর কিছু নই আমরা ব্রান্ধ। কিন্তু সেটা তো একটা নূতন পরিচয় হইল। সে পরিচয়ের শিকড় তো বেশি দূর স্বায় না আমি হয়তে কেবলমাত্র গতকল্য ব্রাহ্মসমাজে দীক্ষা লইয়া প্রবেশ করিয়াছি। ইহার চেয়ে পুরাতন ও পাক পরিচয়ের ভিত্তি আমার কিছুই নাই ? অতীতকাল হইতে প্রবাহিত কোনো একটা নিত্য লক্ষণ কি আমার मएषा अकबारबरे वडीब्र नाहे ? এরূপ কখনো সম্ভবই হইতে পারে না। অতীতকে লোপ করিয়া দিই এমন সাধ্যই আমার নাই ; সুতরাং সেই অতীতের পরিচয় আমার ইচ্ছার উপর লেশমাত্র নির্ভর করিতেছে না। ।