পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় 8\S সমাজের সাধনাকে আমরা অন্ধ অহংকারে নূতন বলিতেছি কিন্তু তাহার চেয়েও অনেকৃ বেশি সত্য অহংকারে বলিব ইহা আমাদেরই ভিতরকার চিরন্তন-নবযুগে নববসন্তে সেই আমাদের চিরপুরাতনেরই নূতন বিকাশ হইয়াছে। রোপে খ্ৰীস্টান ধর্ম সেখানকার মানুষের কর্মশক্তি হইতে একটি বিশ্বসত্যের বিশেষ রূপ লাভ করিয়াছে। সেইজন্ত খ্ৰীস্টানধর্ম নিউটেস্টামেন্টের শাস্ত্রলিখিত ধর্ম নহে ইহা যুরোপীয় জাতির সমস্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়া পরিপুষ্ট জীবনের ধর্ম ; একদিকে তাহা যুরোপের অস্তরতম চিরন্তন, অন্ত দিকে তাহা সকলের। হিন্দুসমাজের মধ্যেও আজ যদি কোনো সত্যের জন্ম ও প্রচার হয় তবে তাহা কোনোক্রমেই হিন্দুসমাজের বাহিরের জিনিস হইতেই পারে না,—ষদি তাহ আমাদের চিরদিনের জীবন হইতে জীবন না পাইয়া থাকে, যদি সেইখান হইতেই তাহার স্তন্তরস না জুটিয়া থাকে, আমাদের বৃহৎ সমাজের চিত্তবৃত্তি যদি ধাত্রীর মতো তাহার সেবা না করিয়া থাকে তবে কেবল আমাদের হিন্দুসমাজে নহে পৃথিবীর কোনো সমাজেই এই পথের ধারের কুড়াইয়া পাওয়া জিনিস শ্রদ্ধার যোগ্য হয় নাই— তবে ইহা কৃত্রিম, ইহা অস্বাভাবিক, তবে সত্যের চির অধিকারসম্বন্ধে এই দরিত্রের কোনো নিজের বিশেয দলিল দেখাইবার নাই, তবে ইহা কেবল ক্ষণকালের সম্প্রদায়ের, ইহা চিরকালের মানবসমাজের নহে। আমি জানি কোনো কোনো ব্রাহ্ম এমন বলিয়া থাকেন, আমি হিন্দুর কাছে যাহা পাইয়াছি, খ্ৰীস্টানের কাছে তাহার চেয়ে কম পাই নাই—এমন কি, হয়তো তাহার মনে করেন তাহার চেয়ে বেশি পাইয়াছেন। ইহার একমাত্র কারণ, বাহির হইতে যাহা পাই তাহাকেই আমরা পাওয়া বলিয়া জানিতে পারি— কেননা, তাহাকে চেষ্টা করিয়া পাইতে হয় এবং তাছার প্রত্যেক অংশকে অনুভব করিয়া করিয়া পাই। এই জন্ত বেতনের চেয়ে মানুষ সামান্ত উপরি পাওনায় বেশি খুশি হইয়া উঠে। আমরা হিন্দু বলিয়া যাহা পাইয়াছি তাহ আমাদের রক্তে মাংসে অস্থিমজ্জায়, তাহ আমাদের মানসপ্রকৃতির তত্ততে তম্ভতে জড়িত হইয়া আছে বলিয়াই তাহাকে স্বতন্ত্ৰ করিয়া দেখিতে পাই না তাহাকে লাভ বলিয়া মনেই করি না—এই জন্ত ইংরেজি পাঠশালায় পড়া মুখস্থ করিয়া যাহা অগভীরভাবে অল্পপরিমাণে ও ক্ষণস্থায়ীরূপেও পাই তাহাকেও আমরা বেশি না মনে করিয়া থাকিতে পারি না। মাথার ভারকে আমরা ভারী বলিয়া জানি ন, কিন্তু মাথার উপরকার পাগড়িটাকে একটা কিছু বলিয়া স্পষ্ট বোরা যায়, তাই বলিয়া এ কথা বল সাজে না যে, মাখ বলিয়া জিনিসটা নাই পাগড়িটা আছে ; সে পাগড়ি বহুমূল্য রত্নমাণিক্যজড়িত হইলেও এমন কথা বলা সাজে না। সেই জন্ত আমরা বিদেশ হইতে মাছ পাইয়াছি দিনরাত্রি তাহাকে লইয়া ধ্যান করিলে এবং প্রচার