পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ه س8b শিক্ষিত সম্প্রদায়ের মধ্যে আমাদের স্বাতন্ত্র্য-অভিমানটা প্রবল হইয়া উঠিতেছে। এই অভিমানের প্রথম জোয়ারে বড়ো একটা বিচার থাকে না, কেবল জোরই থাকে। বিশেষত এতদিন আমরা আমাদের যাহা কিছু সমস্তকেই নির্বিচারে অবজ্ঞা করিয়া আসিয়াছি—আজ তাহার প্রবল প্রতিক্রিয়ার অবস্থায় আমরা মাঝে মাঝে বৈজ্ঞানিক বিচারের ভান করি, কিন্তু তাহা নিবিচারেরও বাড়ী । too এই তীব্র অভিমানের আবিলতা কখনোই চিরদিন টিকিতে পারে না—এই প্রতিক্রিয়ার ঘাত প্রতিঘাত শাস্ত হইয়া আসিবেই তখন ঘর হইতে এবং বাহির হইতে সত্যকে গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে সহজ হইবে । “ਛੋਂ হিন্দুসমাজের পূর্ণ বিকাশের মূর্তি আমাদের কাছে প্রত্যক্ষ ব্যাপার নহে। সুতরাং হিন্দু কী করিয়াছে ও কী করিতে পারে সে সম্বন্ধে আমাদের ধারণ দুর্বল ও অস্পষ্ট। এখন আমরা যেটাকে চোখে দেখিতেছি সেইটেই আমাদের কাছে প্রবল, তাহা যে নানারূপে হিন্দুর যথার্থ প্রকৃতি ও শক্তিকে আচ্ছন্ন করিয়া তাহাকে বিনাশ করিতেছে একথা মনে করা আমাদের পক্ষে কঠিন। পাজিতে যে সংক্রাস্তির ছবি দেখা যায় আমাদের কাছে হিন্দু সভ্যতার মূর্তিটা সেই রকম। সে কেবলই যেন স্নান করিতেছে, জপ করিতেছে, এবং ব্রত উপবাসে কুশ হইয়া জগতে সমস্ত কিছুর সংস্পৰ্শ পরিহার করিয়া অত্যন্ত সংকোচের সঙ্গে এক পাশে দাড়াইয়া আছে । কিন্তু একদিন এই হিন্দু সভ্যতা সজীব ছিল, তখন সে সমূদ্র পার হইয়াছে, উপনিবেশ বাধিয়াছে, দিগবিজয় করিয়াছে, দিয়াছে এবং নিয়াছে ; তখন তাহার শিল্প ছিল, বাণিজ্য ছিল, তাহার কর্মপ্রবাহ ব্যাপক ও বেগবান ছিল ; তখন তাহার ইতিহাসে নব নব মতের অভু্যত্থান, সমাজবিপ্লব ও ধর্মবিপ্লবের স্থান ছিল ; তখন তাহার স্ত্রীসমাজেও বীরত্ব, বিদ্যা ও তপস্ত ছিল ; তখন তাহার আচার ব্যবহার যে চিরকালের মতো লোহার ছাচে ঢালাই করা ছিল না মহাভারত পড়িলে পাতায় পাতায় তাহার পরিচয় পাওয়া যায়। সেই বৃহৎ বিচিত্র, জীবনের-বেগে-চঞ্চল, জাগ্ৰত চিত্তবৃত্তির তাড়নায় নব নব অধ্যবসায়ে প্রবৃত্ত হিন্দু সমাজ–যে সমাজ ভুলের ভিতর দিয়া সত্যে চলিয়াছিল ; পরীক্ষার ভিতর দিয়া সিদ্ধাস্তে ও সাধনার ভিতর দিয়া সিদ্ধিতে উত্তীর্ণ হইতেছিল ; যাহা শ্লোকসংহিতার জটিল রজ্জতে বাধা কলের পুত্তলীর মতো একই নিজাব নাট্য প্রতিনি পুনরাবৃত্তি করিয়া চলিতেছিল না –বৌদ্ধ যে সমাজের অঙ্গ, জৈন যে সমাজের অংশ ; মুসলমান ও খ্ৰীস্টানের যে সমাজের অন্তর্গত হইতে পারিত ; যে সমাজের এক মহাপুরুষ একদা অনার্বদিগকে মিত্ররূপে গ্রহণ করিয়াছিলেন, আর এক মহাপুরুষ কর্মের আদর্শকে বৈদিক স্বাগযজ্ঞের সংকীর্ণত হইতে উদ্ধার করিয়া উদার মন্থয়ত্বের ক্ষেত্রে মুক্তিমান করিয়া