পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৬

& ०१ রবীন্দ্র-রচনাবলী সমস্তটাকেও সাদাসিধা করিয়া তুলিব সে আমাদের নিজের স্বভাব ও নিজের গরজ অনুসারে। শিক্ষার বিষয়কে আমরা অন্ত জায়গা হইতে লইতে পারি কিন্তু মেজাজটাকে মৃদ্ধ লইতে সে ষে বিষম জুলুম । , পূর্বেই বলিয়াছি, পশ্চিমের পোস্যপুত্র তার বিলিতি বাপকেও ছাড়াইয়া চলে। আমেরিকায় দেখিলাম, স্টেটের সাহায্যে কত বড়ো বড়ো বিদ্যালয় চলিতেছে যেখানে ছাত্রদের বেতন নাই বলিলেই হয়। যুরোপেও দরিদ্র ছাত্রদের জন্ত সুলভ শিক্ষার অনেক উপায় আছে। কেবল গরিব বলিয়াই আমাদের দেশের শিক্ষা আমাদের সামর্থ্যের তুলনায় পশ্চিমের চেয়ে এত বেশি দুমূল্য হইল ? অথচ এই ভারতবর্বেই একদিন বিদ্যা টাকা লইয়া বেচা কেনা হইত না । . দেশকে শিক্ষা দেওয়া স্টেটের গরজ ইহা তো অন্তত্ৰ দেখিয়াছি। এই জন্য যুরোপে জাপানে আমেরিকায় শিক্ষায় কৃপণতা নাই। কেবলমাত্র আমাদের গরিব দেশেই শিক্ষাকে দুর্মুল্য ও দুর্লভ করিয়া তোলাতেই দেশের বিশেষ মঙ্গল-এ কথা উচ্চাসনে বসিয়া যত উচ্চস্বরে বলা হইবে বেসুর ততই উচ্চ সপ্তকে উঠিবে। মাতার স্তন্তকে দুর্মুল্য করিয়া তোলাই উচিত, এমন কথা যদি স্বয়ং লর্ড কার্জনও শপথ করিয়া বলিতেন তবু আমরা বিশ্বাস করিতাম না যে শিশুর প্রতি করুণায় রাত্রে তার ঘুম হয় না। বয়স বাড়িতে বাড়িতে শিশুর ওজন বাড়িবে এই তো স্বাস্থ্যের লক্ষণ । সমান থাকিলেও ভালো নয়, কমিতে থাকিলে ভাবনার কথা । তেমনি, আমাদের দেশে যেখানে শিক্ষার অধিকাংশ জমিই পতিত আছে সেখানে বছরে বছরে ছাত্রসংখ্যা বাড়িবে হিতৈষীরা এই প্রত্যাশা করে । সমান থাকিলে সেটা দোষের, আর সংখ্যা যদি কমে তো বুঝিব, পাল্পটি মরণের দিকে ঝু কিয়াছে। বাংলা দেশে ছাত্রসংখ্যা কমিল। সে জন্তে শিক্ষাবিভাগে উদ্বেগ নাই। এই উপলক্ষ্যে একটি ইংরেজি কাগজে লিথিয়াছে,—এই তো দেখি লেখাপড়ায় বাঙালির শখ আপনিই কমিয়াছে—যদি গোখলের অবগুশিক্ষা এখানে চলিত তবে তো অনিচ্ছকের পরে জুলুম করাই হইত। এ সব কথা নির্নমের কথা। নিজের জাতের সম্বন্ধে এমন কথা কেহ এমন অনায়াসে বলিতে পারে না। আজ ইংলণ্ডে যদি দেখা যাইত লোকের মনে শিক্ষার শখ আপনিই কমিয়া আসিতেছে তবে নিশ্চয়ই এই সব লোকই উৎকণ্ঠিত হইয়া লিখিত যে কৃত্রিম উপায়েও শিক্ষার উত্তেজনা বাড়াইয়া তোলা উচিত। নিজের জাতির পরে যে দরদ বাঙালির পরেও ইংরেজের সেই দয়া হইবে এমন আশা করিতেও লজ্জা বোধ করি। কিন্তু জাতিপ্রেমের সমস্ত দাবি মিটাইয়াও মকুন্তপ্রেমের হিসাবে কিছু প্রাপ্য বাকি থাকে ধর্মবুদ্ধির বর্তমান অবস্থায় স্বজাতির জন্য