পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(? • 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বলিয়া সমস্ত চৈতন্ত দিয়া আমরা বুঝি না। এই জন্যই দেশের পুরা দাম দেওয় আমাদের পক্ষে অসম্ভব । যা চাহিতেছি তা পেট ভরিয়া পাই না তার কারণ এ নয় যে, দাতা প্রসন্নমনে দিতেছে না—তার কারণ এই যে, আমরা সত্যমনে চাহিতেছি না । বিদ্যাবিস্তারের কথাটা যখন ঠিকমতে মন দিয়া দেখি তখন তার সর্বপ্রধান বাধাটা এই দেখিতে পাই যে, তার বাহনটা ইংরেজি । বিদেশী মাল জাহাজে করিয়া শহরের ঘাট পর্বস্ত আসিয়া পৌছিতে পারে কিন্তু সেই জাহাজটাতে করিয়াই দেশের হাটে হাটে আমদানি রপ্তানি করাইবার চুরাশা মিথ্যা । যদি বিলিতি জাহাজটাকেই কায়মনে আঁকড়াইয়া ধরিতে চাই তবে ব্যবসা শহরেই আটকা পড়িয়া থাকিবে । এ পর্যন্ত এ অসুবিধাটাকে আমাদের অসুখ বোধ হয় নাই। কেননা মুখে যাই বলি মনের মধ্যে এই শহরটাকেই দেশ বলিয়া ধরিয়া লইয়াছিলাম। দাক্ষিণ যখন খুব বেশি হয় তখন এই পর্যন্ত বলি, আচ্ছ বেশ, খুব গোড়ার দিকের মোট শিক্ষাট বাংলা ভাষায় দেওয়া চলিবে কিন্তু সে যদি উচ্চশিক্ষার দিকে হাত বাড়ায় তবে গমিষ্যত্যুপ হাস্যতাম । আমাদের এই ভীরুতা কি চিরদিনই থাকিয়া যাইবে ? ভরসা করিয়া এটুকু কোনোদিন বলিতে পারিব না যে, উচ্চশিক্ষাকে আমাদের দেশের ভাষায় দেশের জিনিস করিয়া লইতে হুইবে ? পশ্চিম হইতে যা কিছু শিখিবার আছে জাপান তা দেখিতে দেখিতে সমস্ত দেশে ছড়াইয়া দিল, তার প্রধান কারণ, এই শিক্ষাকে তারা দেশী ভাষার আধারে বাধাই করিতে পারিয়াছে । ای অথচ জাপানি ভাষার ধারণাশক্তি আমাদের ভাষার চেয়ে বেশি নয়। নূতন কথা হুষ্টি করিবার শক্তি আমাদের ভাষায় অপরিসীম। তা ছাড়া যুরোপের বুদ্ধিবৃত্তির আকার প্রকার যতটা আমাদের সঙ্গে মেলে এমন জাপানির সঙ্গে নয়। কিন্তু উদযোগী পুরুষসিংহ কেবলমাত্র লক্ষ্মীকে পায় না সরস্বতীকেও পায়। জাপান জোর করিয়া বলিল যুরোপের বিদ্যাকে নিজের বাণীমন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করিব। যেমন বলা তেমনি করা, তেমনি তার ফললাভ । আমরা ভরসা করিয়া এ পর্যন্ত বলিতেই পারিলাম না যে, বাংলাভাষাতেই আমরা উচ্চশিক্ষা দিব এবং দেওয়া যায়, এবং দিলে তবেই বিষ্কার ফসল দেশ জুড়িয়া ফলিবে । 距 আমাদের ভরসা এতই কম যে ইস্কুল কালেজের বাহিরে আমরা যে-সব লোকশিক্ষার আয়োজন করিয়াছি সেখানেও বাংলা ভাষার প্রবেশ নিষেধ। বিজ্ঞানশিক্ষাবিস্তারের জন্ত দেশের লোকের টাঙ্গায় বহুকাল হইতে শহরে এক বিজ্ঞান সভা খাড়া