পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qybr রবীন্দ্র-রচনাবলী কিন্তু আমাদের শিল্পশাস্ত্রের বচন এখনও ষে ফুরাইল না ! স্বয়ং গ্রৌপদীকে সে ছাড়াইয়া গেল। পাঁচ পার হইয় যে ছয়ে আসিয়া ঠেকিল সেটা বর্ণিকাভজং— রঙের ভঙ্গিমা । . . এইখানে বিষম খটকা লাগিল। আমার পাশে এক গুণী বসিয়া আছেন তারই কাছ হইতে এই শ্লোকটি পাইয়াছি। র্তাহাকে জিজ্ঞাসা করিলাম, রূপ, অর্থাৎ রেখার কারবার যেটা যড়ঙ্গের গোড়াতেই আছে আর এই রঙের ভঙ্গি যেটা তার সকলের শেষে স্থান পাইল চিত্রকলায় এ দুটোর প্রাধান্ত তুলনায় কার কত ? তিনি বলিলেন, বলা শক্ত। র্তার পক্ষে শক্ত বই কি ? কুটির পরেই ষে তার অস্তরের টান, এমন স্থলে নিরাসক্ত মনে বিচার করিতে বসা তার দ্বারা চলিবে না। আমি অব্যবসায়ী, অতএব বাহির হইতে ঠাহর করিয়া দেখা আমার পক্ষে সহজ। 臀 রং আর রেখা এই দুই লইয়াই পৃথিবীর সকল রূপ আমাদের. চোখে পড়ে। ইহা মধ্যে রেখাটাতেই রূপের সীমা টানিয়া দেয়। এই সীমার নির্দেশই ছবির প্রধান জিনিস । অনির্দিষ্টত গানে আছে, গন্ধে আছে কিন্তু ছবিতে থাকিতে পারে না । এই জন্যই কেবল রেখাপাতের দ্বারা ছবি হইতে পারে কিন্তু কেবল বর্ণপাতের দ্বারা ছবি হইতে পারে না। বর্ণটা রেখার আনুষঙ্গিক। সাদার উপরে কালোর দাগ এই হইল ছবির গোড়া । আমরা স্বষ্টিতে যাহা চোখে দেখিতেছি তাহ অসম আলোকের সাদার উপরকার সসীম দাগ। এই দাগটা আলোর বিরুদ্ধ তাই আলোর উপরে ফুটয় উঠে। আলোর উলটা কালো, আলোর বুকের উপরে ইহার বিহার। + - কালো আপনাকে আপনি দেখাইতে পারে না । স্বয়ং সে শুধু অন্ধকার, দোয়াতের কালির মতো । সাদার উপর যেই সে দাগ কাটে অমনি সেই মিলনে সে দেখা দেয়। সাদা আলোকের পটটি বৈচিত্র্যহীন ও স্থির, তার উপরে কালে রেখাটি বিচিত্রনৃত্যে ছন্দে ছন্দে ছবি হইয়া উঠিতেছে। শুভ্র ও নিস্তন্ধ অসীম রজতগিরিনিভ, তারই বুকের উপর কালীর পদক্ষেপ চঞ্চল হইয়া সীমার সীমায় রেখায় রেখায় ছবির পরে ছবির ছাপ মারিতেছে । কালীরেখার সেই নৃত্যের ছন্দটি লইয়া চিত্রকলার রূপভেদা: প্রমাণানি । নৃত্যের বিচিত্র বিক্ষেপগুলি রূপের ভেদ, আর তার ছন্দের তালটিই প্রমাণ । k আলো আর কালো অর্থাৎ আলো আর না-আলোর বন্ধ খুবই একান্ত। রংগুলি তারই মাঝখানে মধ্যস্থত করে। ইহারা যেন ৰীণার আলাপের মীড়—এই নীড়ের দ্বারা সুর যেন সুরের অতীতকে পর্যায়ে পর্যায়ে ইশারায় দেখাইয়া দেয়—ভজিতে ভজিতে