পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পরিচয় o @:ፃ চেয়ে জমির ঢাল অনেক বেশি,-সেখানে স্থির দাড়াইয়া থাকা শক্ত, অথচ চলিতে গেলে সুস্থভাবে চলার চেয়ে পড়িয়া মরার সম্ভাবনাই বেশি । বিশ্বপৃথিবীর ঐশ্বৰ ছাত জুতা থেকে আরম্ভ করিয়া গাড়ি বাড়ি পর্যন্ত নানা জিনিষে নানা মূর্তিতে আমাদের চোখের উপরে আসিয়া পড়িয়াছে, - দেশের ছেলেবুড়ো সকলের মনে আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিমুহূর্তে বাড়াইয়া তুলিতেছে। সকলেই আপন সাধ্যমতে সেই আকাঙ্ক্ষার অনুযায়ী আয়োজন করিতেছে। ক্রিয়াকর্ম যা কিছু করি না কেন সেই সর্বজনীন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে তাল রাখিয়া করিতে হইবে। লোক ভাকিয়া খাওয়াইব কিন্তু পঞ্চাশ বছর আগেকার রসনাটা এখন নাই একথা তুলিবার জে কী ! বিলাতে প্রত্যেক মানুষের উপর এই চাপ নাই । যতক্ষণ বিবাহ না করে ততক্ষণ সে স্বাধীন, বিবাহ করিলেও তার ভার আমাদের চেয়ে অনেক কম । কাজেই তার শক্তির উদ্ধৃত্ত অংশ অনেকখানি নিজের হাতে থাকে। সেটা অনেকে নিজের ভোগে লাগায় সন্দেহ নাই। কিন্তু মানুষ যে-হেতুক মানুষ এই জন্য সে নিজেকে নিজের মধ্যেই নিঃশেষ করিতে পারে না । পরের জন্য খরচ করা তার ধর্ম। নিজের বাড়তি শক্তি যে অন্তকে না দেয়, সেই শক্তি দিয়া সে নিজেকে নষ্ট করে, সে পেটুকের মতো আহারে দ্বারাই আপনাকে সংহার করে , এমনতরো আত্মঘাতকগুলো পয়মাল হইয় বাকি যারা থাকে তাদের লইয়াই সমাজ । বিলাতে সেই সমাজে সাধারণের দায় বহন করে, আমাদের দেশে পরিবারের দায় । এদিকে নূতন শিক্ষায় আমাদের মনের মধ্যে এমন এক কর্তব্যবুদ্ধি জাগিয়৷ উঠিতেছে যেটা একালের জিনিস। লোকহিতের ক্ষেত্র আমাদের মনের কাছে আজ দূরব্যাপী—দেশবোধ বলিয়া একটা বড়ে রকমের বোধ আমাদের মনে জাগিয়াছে। কাজেই বন্যা কিংবা দুর্ভিক্ষে লোকসাধারণ যখন আমাদের দ্বারে আসিয়া দাড়ায় তখন খালিহাতে তাকে বিদায় করা আমাদের পক্ষে কঠিন। কিন্তু কুল রাখাই আমাদের বরাবরের অভ্যাস, শুাম রাখিতে গেলে বাধে। নিজের সংসারের জন্ত টাকা আনা, টাকা জমানে, টাকা খরচ করা আমাদের মজ্জাগত ; সেটাকে বজায় রাখিয়া বাহিরের বড়ে দাবিকে মান দুঃসাধ্য। মোমবাতির দুই মুখেই শিখা জালানো চলে না। বাছুর যে গাভীর দুধ পেট ভরিয়া খাইয়া বসে সে গাভী গোয়ালার ভাড় ভরতি করিতে পারে না ;—বিশেষত তার চরিয়া খাবার মাঠ যদি প্রায় লোপ পাইয়া থাকে। পূর্বেই বলিয়াছি, আমাদের জাধিক অবস্থার চেয়ে আমাদের ঐশ্বর্ষের দৃষ্টান্ত বড়ো হইয়াছে। তার ফল হইয়াছে জীবনযাত্রাটা আমাদের পক্ষে প্রায় মরণাত্রা হইয়া উঠিয়াছে। নিজের সম্বলে ভদ্রতারক্ষা করিবার শক্তি অল্পলোকের আছে, অনেকে