পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6:38 f রবীন্দ্র-রচনাবলী সঙ্গে কোনোদিক দিয়া জড়াইয়া পড়ে নাই। তাহার দাক্ষিণ্যের উপর সমস্ত বছরের কল-ফসল নির্ভর করে কিন্তু সে ধনী তেমন নয় যে নিজের দানের কথাটা রটনা করিয়া দিবে। শরতের মতো মাঠে ঘাটে পত্রে পত্রে সে আপনার বদান্ততা ঘোষণা করে না । প্রত্যক্ষভাবে দেনা-পাওনার সম্পর্ক নাই বলিয়া মানুষ ফলাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করিয়া বর্ষার সঙ্গে ব্যবহার করিয়া থাকে। বস্তুত বর্ষার যা-কিছু প্রধান ফল তাহা গ্রীষ্মেরই ফলাহার ভাণ্ডারের উদ্ভূত্ত । এই জন্য বর্ষা-ঋতুটা বিশেষভাবে কবির ঋতু। কেননা কবি গীতার উপদেশকে ছাড়াইয়া গেছে । তাহার কর্মেও অধিকার নাই ; ফলেও অধিকার নাই। তাহার কেবলমাত্র অধিকার ছুটিতে ;–কর্ম হইতে ছুট, ফল হইতে ছুটি । বর্ষ ঋতুটাতে ফলের চেষ্টা অল্প এবং বর্ষার সমস্ত ব্যবস্থা কর্মের প্রতিকুল। এই জন্য বর্ষায় হৃদয়ট ছাড়া পায় । ব্যাকরণে হৃদয় যে লিঙ্গই হউক, আমাদের প্রকৃতির মধ্যে সে যে স্ত্রীজাতীয় তাহাতে সন্দেহ নাই। এই জন্ত কাজ-কর্মের আপিসে বা লাভ লোকসানের বাজারে সে আপনার পালকির বাহির হইতে পারে না। সেখানে সে পর্দা-নশিন । المد বাবুর যখন পূজার ছুটতে আপনাদের কাজের সংসার হইতে দূরে পশ্চিমে হাওয়া থাইতে যান, তখন ঘরের বধূর পর্দ উঠিয়া যায়। বর্ষায় আমাদের হৃদয়-বধূর পর্দা থাকে না । বাদলার কর্মহীন বেলায় সে ষে কোথায় বাহির হইয়া পড়ে তাহাকে ধরিয়া রাখা দায় হয়। একদিন পয়লা আষাঢ়ে উজ্জয়িনীর কবি তাহাকে রামগিরি হইহে অলকায়, মর্ত্য হইতে কৈলাস পর্যস্ত অনুসরণ করিয়াছেন। বর্ষায় হৃদয়ের বাধা-ব্যবধান চলিয়া যায় বলিয়াই সে সময়ট বিরহী বিরহিণীর পক্ষে বড়ো সহজ সময় নয়। তপন হৃদয় আপনার সমস্ত বেদনার দাবি লইয়া সম্মুখে আসে। এদিক ওদিকে আপিসের পেয়াদ থাকিলে সে অনেকটা চুপ করিয়া থাকে কিন্তু এখন তাহাকে থামাইয়া রাখে কে ? বিশ্বব্যাপারে মস্ত একটা ডিপার্টমেন্ট আছে, সেটা বিনা কাজের। সেট পাব্লিক ওআর্কস ডিপার্টমেন্টের বিপরীত। সেখানে যে-সমস্ত কাও ঘটে সে একেবারে বেহিসাবি। সরকারি হিসাবপরিদর্শক হতাশ হইয়। সেখানকার খাতাপত্র পরীক্ষা একেবারে ছাড়িয়া দিয়াছে। মনে করে, ধামধা এত বড়ো আকাশটার আগাগোড়া নীল তুলি বুলাইবার কোনো দরকার ছিল না—এই শব্দহীন শূন্তটাকে বর্ণহীন করিয়া রাখিলে সে তো কোনো নালিশ চালাইত না। তাহার পরে, অরণ্যে প্রাস্তরে লক্ষ লক্ষ ফুল একবেল ফুটিয়া আর-একবেলা ঝরিয়া যাইতেছে, তাহাজের বোট হইতে পাতার ডগ