পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q8 e রবীন্দ্র-রচনাবলী তার হাসিকান্না চলিতে চলিতে ঝরাইয়া ফেলিবার মতো নয়। যেমন ঝরনা, সে দুটিয়া চলিতেছে বলিয়াই ঝলমল করিয়া উঠিতেছে। তার মধ্যে ছায়া আলোর কোনো বাসা নাই, বিশ্রাম নাই। কিন্তু এই ঝরনাই উপত্যকায় যে সরোবরে গিয়া পড়িয়াছে, সেখানে আলো যেন তলায় ডুব দিতে চায়, সেখানে ছায়া জলের গভীর অন্তরঙ্গ হইয়া উঠে । সেখানে স্তব্ধতার ধ্যানের আসন । h কিন্তু প্রাণের কোথাও আসন নাই, তাকে চলিতেই হইবে, তাই শরতের হাসিকায় কেবল আমাদের প্রাণপ্রবাহের উপরে ঝিকিমিকি করিতে থাকে, যেখানে আমাদের দীর্ঘনিশ্বাসের বাসা সেই-গভীরে গিয়া সে আটকা পড়ে না। তাই দেখি শরতের রৌদ্রের দিকে তাকাইয়া মনটা কেবল চলি চলি করে, বর্ষার মতো সে অভিসারের চলা নয়, সে অভিমানের চলা । বর্ধায় যেমন আকাশের দিকে চোখ যায় শরতে তেমনি মাটির দিকে । আকাশপ্রাঙ্গণ হইতে তখন সভায় আস্তরণখানা গুটাইয়া লওয়া হইতেছে, এখন সভার জায়গা হইয়াছে মাটির উপরে। একেবারে মাঠের এক পার হইতে আর এক পার পর্যন্ত সবুজে ছাইয়া গেল, সেদিক হইতে আর চোখ ফেরানো যায় না। শিশুটি কোল জুড়িয়া বসিয়াছে সেইজন্যই মায়ের কোলের দিকে এমন করিয়া চোখ পড়ে। নবীন প্রাণের শোভায় ধরণীর কোল আজ এমন ভরা। শরৎ বড়ে বড়ো গাছের ঋতু নয়, শরৎ ফসলখেতের ঋতু। এই ফসলের খেত একেবারে মাটির কোলের জিনিস। আজি মাটির যত আদর সেইখানেই হিল্লোলিত, বনম্পতি দাদার। একধারে চুপ করিয় দাড়াইয়া তাই দেখিতেছে। 亨 এই ধান, এই ইক্ষু, এরা যে ছোটো, এরা যে অল্পকালের জন্ত আসে, ইহাদের যত শোভা যত আনন্দ সেই দুদিনের মধ্যে ঘনাইয়া তুলিতে হয়। স্বর্ষের আলো ইহাঙ্গের জষ্ঠ যেন পথের ধারের পানসত্রের মতো-ইছারা তাড়াতাড়ি গওয ভৱিয় স্বকিরণ পান করিয়া লইয়াই চলিয়া যায়—বনম্পতির মতো জল বাতাস মাটিতে ইহাদের অন্নপানের বাধা বরাদ নাই ; ইহারা পৃথিবীতে কেবল আতিথ্যই পাইল, আবাস পাইল না। শরৎ পৃথিবীর এই সব ছোটােদের এই সব ক্ষণজীবীদের ক্ষণিক উৎসবের ঋতু। ইহার যখন আসে তখন কোল ভরিয়া আসে, যখন চলিয়া যায় তখন শূন্ত প্রান্তরটা শূন্ত আকাশের নিচে হা হা করিতে থাকে। ইহারা পৃথিবীর সবুজ মেঘ, হঠাৎ দেখিতে দেখিতে ঘনাইয় ওঠে, তার পরে প্রচুর ধারায় আপন বর্ষণ সারিয়া দিয়া চলিয়া যায়, কোথাও নিজের কোনো দাবি দাওয়ার দলিল রাখে না । আমরা তাই বলিতে পারি, হে শরৎ তুমি শিশিরাশ্র কেলিতে কেলিতে গত এবং