পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কর্তার ইচ্ছায় কর্ম 疊 QQ○ ৰোগ দিয়াছি তাহা কালের ধর্মে—ন যদি দিতাম, যদি বলিতাম রাষ্ট্রব্যাপারে আমরা চিরকালই কর্তাভজা, সেটা আমাদের পক্ষে নিতান্ত লজ্জার কথা হইত। অন্তত একটা ফাটল দিয়াও সত্য আমাদের কাছে দেখা দিতেছে, এটাও শুভলক্ষণ । সত্য দেখা দিল বলিয়াই আজ এতটা জোর করিয়া বলিতেছি যে, দেশের যেআত্মাভিমানে আমাদের শক্তিকে সম্মুখের দিকে ঠেলা দিতেছে তাকে বলি সাধু, কিন্তু ষে-আত্মাভিমান পিছনের দিকের অচল-খোটায় আমাদের বলির পাঠার মতে বাধিতে চায় তাকে বলি ধিক । এই আত্মাভিমানে বাহিরের দিকে মুখ করিয়া বলিতেছি, রাষ্ট্ৰতন্ত্রের কর্তৃত্বসভায় আমাদের আসন পাতা চাই, আবার সেই অভিমানেই ঘরের দিকে মুখ ফিরাইয়া হাকিয়া বলিতেছি, “খবরদার, ধর্মতন্ত্রে, সমাজতন্ত্রে এমন কি ব্যক্তিগত ব্যবহারে কর্তার হুকুম ছাড়া এক পা চলিবে না”—ইহাকেই বলি হিন্দুয়ানির পুনরুজ্জীবন। দেশাভিমানের তরফ হইতে আমাদের উপর হুকুম আসিল, আমাদের এক চোখ জাগিবে আর এক চোখ ঘুমাইবে। এমন হুকুম তামিল করাই দায়। বিধাতার শাস্তিতে আমাদের পিঠের উপর যখন বেত পড়িল তখন দেশাভিমান ধড়ফড় করিয়া বলিয়া উঠিল, “ওপড়াও ওই বেতবনটাকে ৷” ভুলিয়া গেছে বেতবনটা গেলেও বঁাশবনটা আছে। অপরাধ বেতেও নাই বাশেও নাই, আছে আপনার মধ্যেই । অপরাধটা এই ষে সত্যের জায়গায় আমরা কর্তাকে মানি, চোখের চেয়ে চোখের ঠুলিকে শ্রদ্ধ করাই আমাদের চিরাভ্যাস। যতদিন এমনি চলিবে ততদিন কোনো-না-কোনো ঝোপে-ঝাড়ে বেতবন আমাদের জন্ত অমর হইয়া থাকিবে । সমাজের সকল বিভাগেই ধর্মতন্ত্রের শাসন এক সময়ে যুরোপেও প্রবল ছিল। তারই বেড়-জালটাকে কাটিয়া যখন বাহির হইল তখন হইতেই সেখানকার জনসাধারণ আত্মকর্তৃত্বের পথে যথেষ্ট লম্বা করিয়া পা ফেলিতে পারিল । ইংরেজের দ্বৈপায়নত ইংরেজের পক্ষে একটা বড়ো সুযোগ ছিল । কেননা যুরোপীয় ধর্মতন্ত্রের প্রধান আসন রোমে। সেই রোমের পূর্ণপ্রভাব অস্বীকার করা বিচ্ছিন্ন ইংলণ্ডের পক্ষে কঠিন হয় নাই। ধৰ্মতন্ত্র বলিতে যা বোঝায় ইংলণ্ডে আজও তার কোনো চিহ্ন নাই, এমন কথা বলি না । . কিন্তু বড়োঘরের গৃহিণী বিধবা হইলে যেমন হয় তার অবস্থা তেমনি। একসময়ে যাদের কাছে সে নখ-নাড়া দিয়াছে, ন্যায়ে অন্যায়ে আজ তাদেরই মন জোগাইয়া চলে ; পাশের ঘরে তার বাসের জায়গা, খোরপোশের জন্য সামান্ত কিছু মাসহায়া বরাদ্দ। হালের ছেলেরা পূৰ্বৱন্তরমতে বুড়িকে হস্তায় হস্তায় প্রণাম করে বটে কিন্তু মান্ত করে না। এই গৃহিণীর দাবরাব যদি পূর্বের মতো ধাৰিত তবে ছেলেমেয়েদের কারও আজ টুশৰ করিবার জে থাকিত না । • حسمیه